স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব | বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, জ্ঞানী মাত্রই উপলব্ধি করতে পারে। প্রবাদে আছে "বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয় না" অর্থাৎ বই পড়লে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন। জ্ঞান অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো বই পড়া। আপনি যদি জ্ঞান অর্জন করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত বই পড়তে হবে। বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো।
পেজ সূচিপত্র

স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব

আসলে, স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দু এক কথায় বলে শেষ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে বইয়ের মত মূল্যবান দ্বিতীয় কোন বস্তু রয়েছে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। বইয়ের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে বইয়ের মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞান বিতরণ করে। যত বই পড়বেন, আপনার জ্ঞান ততই সমৃদ্ধ হবে। শুধু জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে নয় বরং সমাজের প্রত্যেকটা স্তরের সাথেই বই জড়িত। 

আইন আদালত বলেন, ধর্ম বলেন মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ সকল বিষয়ের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত রয়েছে বই। পৃথিবীতে যতগুলো ধর্ম রয়েছে, প্রত্যেক ধর্মেরই কিতাব রয়েছে। সে অর্থে বলা যায়, সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হলো কিতাব বা বই। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দিক-নির্দেশনা প্রদান করার জন্য, বিভিন্ন নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন আর প্রত্যেক নবী রাসুলের উপরেই কোন কোন কিতাব নাজিল করেছেন।

মানুষের চিন্তা ভাবনা, ধ্যান-ধারণা, গবেষণা সবকিছুই লিপিবদ্ধ থাকে বইয়ে। বইয়ের মাধ্যমে যুগের পর যুগ ইতিহাস জনে জনে পৌঁছে যাচ্ছে। আপনি যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, বই মানুষের পরম বন্ধু। পৃথিবীর সকলেই যদি আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, বই কখনো আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। বই সর্বদাই আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে থাকবে। 

মনের অন্ধকার দূর হয়

বই পড়ার মাধ্যমে মনের অন্ধকার দূর হয়। মন হয়ে যায় আলোকিত। বিদ্যা এক ধরনের আলো যা মানুষকে সত্যকে সত্য বলে জানতে সহায়তা করে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। সুস্থ ও সবল চক্ষু থাকলেই দেখা যায় না, কোন বিষয় অবলোকন করতে গেলে আলোর প্রয়োজন হয়। জ্ঞান হলো আলো স্বরূপ। জ্ঞান অর্জনের পূর্বে, পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়গুলো আপনার কাছে এক ধরনের মনে হবে এবং সবকিছুই আপনার কাছে গুবলেট হয়ে যাবে। আপনি বৈশ্বিক অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে থাকবেন। 
পক্ষান্তরে আপনি যখন জ্ঞান অর্জন করবেন তখন আপনার সামনে বিদ্যা আলোর মতো কাজ করবে, এবং পৃথিবীর সকল বিষয় সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা হবে অনন্য। আপনি যদি বই পড়ার মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন করেন তাহলে, বিশ্বে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে সে সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা ও ক্ষমতা আপনার ভেতরে জন্ম লাভ করবে। সুতরাং বিদ্যা মনের অন্ধকার দূর করে। বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সত্যিই অনেক বেশি। 

জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়

এ কথা বলার অপেক্ষায় রাখে না যে, বই পড়লে জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়। বই হলো জ্ঞানের সাগর। জ্ঞানের এই বিশাল সমূহ থেকে আপনি অল্প অল্প জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন বই পড়ার মাধ্যমে। সুতরাং যত বেশি বই পড়বেন তত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত, সকল ঘটনাবলীর উপরে বই রচিত হয়েছে। 

ইতিহাসের যত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার রয়েছে এই আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে বই রচিত হয়েছে। বই কতটা দামী হতে পারে তা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, বড় বড় বিজ্ঞানীদের লেখনিগুলো থেকে। বড় বড় বিজ্ঞানীগণ তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তাই নিয়মিত বই পড়ুন নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন। নিজে বই পড়ুন অন্যকে বই পড়তে উৎসাহিত করুন। অন্যদের মাঝে বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ছড়িয়ে দিন। 

বিচক্ষণতা বৃদ্ধি পায়

আপনি যদি নিয়মিত বই পাঠ করেন তাহলে বিচক্ষণতা বৃদ্ধি পাবে। শুধু তাই নয় বড় বড় কূটনৈতিক যারা রয়েছে তারা নিয়মিত বই পড়ে থাকে। এবং বাস্তব জীবনে সেই কূটনৈতিক নীতিগুলো প্রয়োগ করে। বড় বড় মনীষীদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বই পড়া, বই পড়ার মাধ্যমেই তারা দার্শনিক হতে পেরেছে। আপনি যত বেশি পরিমাণে বই পড়বেন তত বেশি বিচক্ষণতা বৃদ্ধি পাবে। বিচক্ষণতা বৃদ্ধির একমাত্র হাতিয়ার হলো নিয়মিত বই পড়া।

আপনি যখন বিভিন্ন বিষয়ের উপরে, বই পড়বেন তখন সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। এখন কথা হলো আমরা যত বই পড়ি, এই বইগুলোর কোন তথ্যই তো আমাদের হুবহু মনে থাকে না। তাহলে বই পড়ে লাভ কি? এই প্রশ্নের জবাব হলো: আপনি যখন বই পাঠ করেন তখন আপনার অবচেতন মন সক্রিয় থাকে। 
অবচেতন মন সক্রিয় মনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অবচেতন মন ক্যাপচার করে নেয় এর ফলে, বই পড়ে আপনার কিছু মনে না থাকলেও বইয়ের মধ্যস্থ তথ্যগুলো আপনার মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়ে যায়। আর এর প্রভাব আপনার দৈনন্দিন জীবনে পরিলক্ষিত হয়।সুতরাং বিচক্ষণতা বৃদ্ধির উপায় হলো বই পাঠ করা। বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আরো অনেক রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।  

অবসাদ কেটে যায়

আপনি যদি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন, বা কোন কারনে উত্তেজিত থাকেন। সেক্ষেত্রে বই পাঠ করতে পারেন। আপনি যখন বইয়ের ভিতরে প্রবেশ করবেন তখন আপনার মধ্যকার যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনা ভাব দূরীভূত হয়ে যাবে। আর সে কারণেই বলা হয় বই পাঠ করলে অবসাদ কেটে যায়। বর্তমানে, বই পড়ার প্রবণতা অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। এর কারণ হলো তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব। তথ্য প্রযুক্তির আধিক্যতার কারণে মানুষ এখন কাগজের বই পড়ার ফুরসৎ পায়না।

এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে হাইপার টেনশন জনিত সমস্যা গুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি যখন বই পড়বেন তখন আপনার অবসাদ কেটে যাবে, পক্ষান্তরে টেকনোলজি ব্যবহার করে কখনোই কিন্তু আপনি আপনার অবসাদ নিরসন করতে পারবেন না। তাই দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য বই পাঠ করার বিকল্প নেই। সুতরাং অবসাদ দূর করার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। 

লেখনিতে পাণ্ডিত্য আসে

আপনি যখন, বেশ কিছু বই পড়বেন। তখন এমনিতেই আপনার মনে এই বাসনা জাগ্রত হবে যে, কিছু লিখি। নিয়মিত বই পাঠ করলে আপনি আপনার মনের ভাবগুলো খুব সুন্দর ভাবে লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবেন। তাই বলা হয়, প্রচুর পরিমাণে বই পাস করলে লেখনীতে পাণ্ডিত্য আসে। আপনি যদি আপনার লেখনি আরো ধারালো ও সূচালো করতে চান, সেক্ষেত্রে বই পাঠ করার বিকল্প নেই। 
ইতিহাস বিখ্যাত স্বনামধন্য যত বড় বড় লেখক রয়েছে, তাদের জীবনী অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তারা জীবনের বেশিরভাগ সময় বই পাঠ করে কাটিয়েছেন। তাই আপনি যদি একজন সু লেখক হতে চান সে ক্ষেত্রে বই পাঠ করার বিকল্প নেই। নিয়মিত বই পাস করলে বিভিন্ন লেখকের লেখনীর ধরন সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সেখান থেকে, প্রয়োজনীয় বিষয়টি আপনি আপনার লেখনীতে ফুটে তুলতে পারবেন। 

শেষ কথা

স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব বা বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সম্পর্কে ইতোমধ্যে উপরে যে সকল তথ্য তুলে ধরা হলো আশা করি সেগুলো আপনার ভালো লেগেছে। বই পড়ে আরো অনেক উপকার লাভ করা যায়। বই পড়ে আরও যে সকল উপকার পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো হয়তোবা পরবর্তীতে তুলে ধরা হবে। এই আর্টিকেলটি অধ্যায়ন করার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্যতম উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে, নিজেকে সার্থক মনে হবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url