সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম জেনে রাখলে সঠিক নিয়মে সালাতুল হাজত আদায় করতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনি সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে না জানেন তাহলে, কখনোই সঠিকভাবে সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করতে পারবেন না। আসুন দেখে নেয়া যাক, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
সূচি নির্দেশনা

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বালা মুসিবতে জর্জরিত হয়ে থাকে কিংবা বিভিন্ন চিন্তায় চিন্তিত হয়ে মানসিক শারীরিক সমস্যায় ভোগে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে থাকে।  কিন্তু এর সুন্নাত পদ্ধতি হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালার নিকটে চাইতে পারলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা সকল বিপদ আপদ থেকে এবং সকল বালা-মুসিবত থেকে উদ্ধার করবেন।

হাদিসে বর্ণিত অনেক দোয়া আছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে বিপদ থেকে মুক্ত দান করেন।
বিপদ আপদ বালা মুসিবত থেকে উদ্ধারের জন্য উত্তম পদ্ধতি দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহ তায়ালার নিকটে উক্ত বিপদ আপদ ও চিন্তা পেরেশানি মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকটে দোয়া করা।

সালাতুল হাজত কি

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে সালাতুল হাজত কি? তা জেনে নেয়া উচিত। নিচে সালাতুল হাজত কি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর তুলে ধরা হবে। যাইহোক আসুন দেখে নেয়া যাক, সালাতুল হাজত কি? 

কোন জায়েজ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়াকে সালাতুল হাজত বলে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা কোন প্রকার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য এই নামাজ পড়তে হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন,  واستعينوا بالصبر والصلاه ان الله مع الصابرين অর্থাৎ তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ধৈর্য ধারণকারীদের সাথে আছেন। 

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, عن حذيفه رضي الله عنه قال كان النبي صلي الله عليه وسلم اذا حذبه امر صلي 
অর্থ হযরত হুযাইফা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কোন বিপদের সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
অন্য হাদিসে আছে আসলে আকরাম সাঃ বলেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট কিংবা অন্য কোন মানুষের নিকটে প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন ভালোভাবে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহতালার প্রশংসা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়তে হবে। মনোযোগের সাথে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো পড়লে আপনি সালাতুল হাজতের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তো আসুন জেনে নেয়া যাক, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম। 

সালাতুল হাজত পড়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই বরং অন্যান্য নামাজের নেই উত্তমরূপে ওযু করে দুই রাকাত নামাজ যে কোন সূরা দিয়ে আদায় করতে পারবে। দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালার হামদুছানা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপরে দরুদ শরীফ পাঠ করে নিজের মনের বাসনা আল্লাহ তাআলার নিকটে ব্যক্ত করে একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে কাকুতি মিনতি করে দোয়া করবে।

সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময় সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হবে। তাই আপনি যদি সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়  সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। 

সালাতুল হাজত নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত যেকোনো সময় ইচ্ছে করলে পড়া যায়, সালাতুল হাজতের জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই যে, অমুক সময় পড়তে হবে। যখনই আপনার কোন সমস্যা দেখা দিবে ঠিক তখনই আপনি সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে পারবেন। সালাতুল হাজত মানেই হলো সমস্যা থেকে মুক্তির নামাজ। অর্থাৎ যখন আপনার কোন সমস্যা দেখা দিবে তখন নামাজ পড়তে হবে। এর জন্য ধরা বাধা কোন ওয়াক্ত নেই। 

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত

নিয়ত মূলত অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। আর এ কারণেই অনেক ওলামায়ে কেরাম বলে থাকেন যে যে কোন নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। মনে মনে সংকল্প করলেই নামাজের নিয়ত হয়ে যায়। যাই হোক আপনি যদি সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পড়তে থাকুন। নিচে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত তুলে ধরা হবে। 
সালাতুল হাজত পড়ার জন্য অন্যান্য নামাজের ন্যায় নিয়ত করতে হবে। অর্থাৎ বাংলাতে এভাবে নিয়ত করবে যে, আমি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত সালাতুল হাজাত আদায় করতেছি। যাইহোক, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া আরবি: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لاَ تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلاَّ غَفَرْتَهُ وَلاَ هَمًّا إِلاَّ فَرَّجْتَهُ وَلاَ حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلاَّ قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ:  লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারিম সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল করীম ওয়াল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন আস‌আলুকা মূজিবাতি রহমাতিকা ওয়া আজাইমায মাগফিরাতিকা ওয়াল গনীমাতা মিন কূল্লি বিররিন ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসমিন লা তাদাঅলি জাম্বান ইল্লা গাফারতা ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতা ওয়ালা হাজাতান ইল্লা ক্বাজাইতাহা ইয়া আরহামার রাহীমিন।

অর্থ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি সহিষ্ণু ও দয়ালু । সকল দোষ ত্রুটি  থেকে পবিত্র মহান আরশের প্রভু এবং সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা, আমি তোমার কাছে চাই তোমার রহমত, আকর্ষণকারী সকল ভালো কর্মের উসিলায় তোমার ক্ষমা ও মাগফেরাত। 

আকর্ষণকারী সকল কাজের বরকত, সকল নেক আমল সাফল্য লাভের এবং সব ধরনের পাপ থেকে নিরাপত্তা লাভের আমার কোন গুনাহ মাফ করা ছাড়া রেখে দিও না। আমার কোন সমস্যা সমাধান ছাড়া রেখে দিও না। আমার কোন প্রয়োজন যাতে তোমার সন্তুষ্টি রয়েছে তা যেন অপূর্ন না থাকে। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।

সালাতুল হাজতের শেষে এই দোয়াও পড়তে পারেন।ربنا اتنا في الدنيا حسنه وفي الاخره حسنه وقنا عذابا نار  উচ্চারণঃ রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ হে আমাদের পালনকর্তা আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। 

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে ইতোমধ্যে উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত, সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো। এই নামাজ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। যদি ভালোভাবে এই নামাজ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে পড়ে আল্লাহতালার দরবারে দোয়া করা যায়, অবশ্যই ইহার ফল পাওয়া যাবে। 

তবে অবৈধ কোন বিষয়ে লাভ করার জন্য সালাতুল হাজত বলে তা গুনাহের কারণ হবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা কখনোই আপনাকে এমন কোন বিষয়ের ব্যাপারে সুপারিশ গ্রহণ করবেন না যা হালাল নয়। তাই আপনি সালাতুল হাজত নামাজ পড়বেন শুধুমাত্র হালাল কোন বিষয়ে লাভের জন্য। 
ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায় সাহাবায়ে কেরামগণ তাদের সকল প্রয়োজনের কথা জানাতেন। এমনকি তাদের জুতার ফিতা ও যদি ছেড়ে যেত তাহলেও তারা আল্লাহর নিকটে চাইতেন।সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, সালাতুল হাজত কতটা ফজিলতপূর্ণ একটি নামাজ। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url