আকিকার নিয়ম | আকিকার দোয়া

অনুসরণ করে যথাযথভাবে আকিকা করা উচিত। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পিতা-মাতার উপরে কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যেমন আজান দেওয়া, তাহনিক করা একটি সুন্দর নাম রাখা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আকিকা করা। যাই হোক নিচে, আকিকার নিয়ম তুলে ধরা হলো। আসুন দেখে নেয়া যাক, আকিকার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 
সূচি নির্দেশনা

আকিকা শব্দের অর্থ কি | আকিকা কাকে বলে

আকিকার নিয়ম এবং আকিকার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার পূর্বে আকিকা শব্দের অর্থ কি? তা জেনে নেয়া উচিত। কেননা আপনি যদি আকিকা শব্দের অর্থ কি? বা আকিকা কাকে বলে? তা না জানেন তাহলে আকিকার নিয়ম ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন না। আর তাই আকিকার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আকিকা শব্দের অর্থ কি? বা আকিকা কাকে বলে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর তুলে ধরা হলো। 

"আকিকা" মূলত আরবি ভাষার একটি শব্দ। এই শব্দটির বাংলা অর্থ হলো: কাটা, পৃথক করা ইত্যাদি। "আকিকা" ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিভাষা। "আকিকা" বলতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করার লক্ষ্যে যে, সন্তানের জন্য জন্তু জবাই করে যে অনুষ্ঠান করা হয় শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকেই আকিকা বলে।

আকিকার নিয়ম | আকিকা দেওয়ার নিয়ম

আপনি যদি আপনার সন্তানের জন্য আকিকা করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আকিকার নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। যথাযথভাবে যদি আপনি আকিকার নিয়ম অনুসরণ না করেন সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে আকিকা আদায় নাও হতে পারে। তাই আকিকা করার পূর্বে আকিকার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। নিচে আকিকার নিয়ম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আকিকার  ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো, প্রতি উত্তরে তিনি বললেন "ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি বকরী আর মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটিভ বকরী। আকিকার পশু নর হোক মাদা হোক তাতে কোনো অসুবিধা নেই।" (সুনানে তিরমিজি)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ عق رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الحسن والحسين بكبشين كبشين অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাঃ হাসান এবং হোসাইন রাতি আল্লাহু আনহুর পক্ষে দুইটি দুইটি ভেড়া আকিকা করেছেন।

সন্তান জন্মগ্রহণের সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। সন্তান যদি ছেলে হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে দুটি ছাগল কিংবা ভেড়া যবেহ করবে, মেয়ে হলে তার পক্ষ একটি থেকে ছাগল বা ভেড়া জবাই করবে। ছেলের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা ভেড়া দিয়েও আকিকা করা যাবে এবং মাথার চুল মুন্ডিয়ে এর ওজনে স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য সদকা করবে। যদি কেউ সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারে তাহলে ১৪ তম দিনে ১৪ তম দিনেও যদি না করতে পারে তাহলে ২১তম দিনে করবে অথবা অন্য যে কোন দিনে আকিকা করতে পারবে।

আকিকার সম্পর্কে সমাজে একটি ভুল প্রথা প্রচলন আছে যে, সপ্তম দিনে নবজাতকের চুল মুন্ডানোর জন্য মাথায় যখন খুর লাগানো হয় ঠিক সেই সময়েই আকিকার পশু জবাই করতে হবে। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। চাই চুল মুন্ডানোর পরে পশু যাবেহ করুক কিংবা চুল মুন্ডানোর সময় করুক আকিকা হয়ে যাবে।

আকিকার দোয়া ও মাসআলা

আকিকার নিয়ম কানুন সমুহ সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে আকিকার দোয়া তুলে ধরা হবে। আপনি যদি আকিকার দোয়া না জানেন সে ক্ষেত্রে নিচে বর্ণিত, আকিকার দোয়া দেখে নিতে পারেন। চাইলে মুখস্ত করে রাখতে পারেন। আসুন দেখে নেয়া যাক, আকিকার দোয়া। 

আকিকার দোয়া আরবিতে: 
اللهم عقيقته ابني دمها بدمه ولحمها بلحمه وعظمها بعزمه وجلدها بجلده وشعرها بشعره اللهم اجعلها فداء لإبني من النار، اني وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرض حنيفا وما أنا من المشركين ان صلاتي ونسكي ومماتي لله رب العالمين لا شريك له وبذلك امرت انا اول  من المسلمين، اللهم منك ولك بسم الله الله اكبر
আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আকিকাতু ইবনী দামুহা বিদামিহী ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহী ওয়া আজমুহা বিয়াজমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহী ওয়া শা"রুহা বিশা"রিহী আল্লাহুম্মাজ আলহা ডিজাইন লিইবনী মিনান্নার । ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বির আলামিন লা শারীকালাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু আনা আওওলুল মুসলিমীন আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার। 

আকিকার মাসআলা: 

  • উপরে উল্লেখিত দোয়াটি পাঠ করে ধারালো ছুরি দিয়ে পশু যবেহ করে দিবে।
  • সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় যদি পিতা-মাতার স্বচ্ছলতা না থাকার কারণে আকিকা করতে না পারে তাহলে যখন স্বচ্ছলতা হবে তখন ও আকিকা করলে আকিকা হয়ে যাবে।
  • দারিদ্রতার কারণে পিতা-মাতা সন্তানের আকিকা করতে না পারলে সন্তান স্বাবলম্বী হওয়ার পরে যদি নিজের আকিকা নিজে করে আকিকা হয়ে যাবে।

আকিকার উপকারিতা

আকিকার নিয়ম এবং আকিকার দোয়া সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আকিকা করার বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। আকিকার নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক পদ্ধতিতে যদি আপনি অপেক্ষা করেন সেক্ষেত্রে যে সকল উপকারিতা পাবেন সেগুলো নিচে লিস্ট আকারে তুলে ধরা হয়। 

(১) আকিকা করার দ্বারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।
(২) সন্তান বিভিন্ন প্রকার বালা মুসিবত থেকে হেফাজত থাকে।
(৩) সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপর খুশি প্রকাশ হয় (যা আল্লাহ তাআলার বড় নিয়ামত)
(৪) আকিকার দাওয়াতের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে সম্পর্ক ও ভালোবাসা বৃদ্ধি হয়।
(৫) নবজাতকের জন্য আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব মঙ্গলের দোয়া করেন।
(৬) আকিকা করার দ্বারা পিতা মাতা সন্তানের সুপারিশের হকদার হয়।

আকিকার ফজিলত

আকিকা করার ফজিলত অত্যাধিক। আকিকা করার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। আকিকার ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস সমূহের মধ্য থেকে কয়েকটি হাদিস নীচে তুলে ধরা হবে। নিম্ন বর্ণিত  হাদিস সমূহ থেকে আপনি, আকিকার ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারবেন। 
আপনি যদি আকিকার ফজিলত অর্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আকিকার নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। তো আসুন জেনে নেয়া যাক, হাদিস অনুযায়ী আকিকার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত। 

সালমান ইবনে আমের আয-যাব্বী হতে বর্ণিত, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: عن سلمان عامر الضبي قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مع الغلام عقيقة فاهريقوا عنه دما واميطوا عنه الاذى

অর্থ: প্রত্যেক শিশুর সাথে আকিকা রয়েছে অতএব তোমরা তাহার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত (অর্থাৎ পশু জবেহ) কর। এবং তোমরা তার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (যেমন চুল ইত্যাদি) দূর কর। এছাড়াও আকিকা করার আরো অনেক ফজিলত রয়েছে। 

গরু ও ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

গরু ও ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়তে হবে নিচে উল্লেখিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়লে আপনি গরু ও ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। 

(১) যে সকল জন্তু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ সে সকল জন্ত দ্বারা আকিকা করাও জায়েজ। 
(২) আর যে সকল পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই সে সকল পশু দ্বারা আকিকা করাও জায়েজ নেই , যেমন হরিণ নীল গাই হাঁস মুরগি কবুতর ইত্যাদি।
(৩) কোরবানির পশু (যেমন গরু মহিষ) তে ছেলের জন্য দুই অংশ এবং মেয়ের জন্য এক অংশ নেওয়া জায়েজ আছে।
(৪) কোরবানির জন্তু যেভাবে দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী আকিকার পশু উক্ত দোষ  ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি।
(৫) কোন ব্যক্তি যদি এক বছরের কম কোন ছাগলের মাধ্যমে আকিকা করে তাহলে তার আকিকা শুদ্ধ হবে না।

আকিকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম

আকিকার নিয়ম অনুযায়ী কোরবানির গোশতের ন্যায় আকিকার গোশত‌ও তিন ভাগ করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ এক ভাগ গরিব মিসকিনের জন্য একভাগ আত্মীয় স্বজনের জন্য এক ভাগ নিজের জন্য। তবে যদি কারো পরিবারের জনসংখ্যা বেশি হয় তাহলে নিজেরা সব গোস্ত রেখে দেওয়া জায়েয আছে। 

যার জন্য আকিকার দেওয়া হচ্ছে তার  পিতা মাতা ভাই বোন সকলেই উক্ত আকিকার গোশত খেতে পারবে অন্য কেউ খাওয়াতে পারবে। কাঁচা গোশত বিলিয়ে দেওয়া কিংবা রান্না খাওয়ানো জায়েজ আছে। আকিকার গোশত  দ্বারা ওলিমা করা ও জায়েজ আছে।

আকিকার কুসংস্কার

ইসলামী দৃষ্টিতে আকিকার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিন্তু আকিকা উপলক্ষে মুসলিম সমাজে কিছু প্রথা চালু আছে এগুলো থেকে বেঁচে থাকা সকল মুসলমানের জন্য উচিত এবং আকিকার নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক পদ্ধতিতে আকিকার অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়। আকিকার সাথে সম্পর্কিত যে সকল কুসংস্কার রয়েছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

  • নানার বাড়ির সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও আকিকা উপলক্ষে নানার বাড়ির পক্ষ থেকে আকিকার পশু দিতে হয় এবং এটাকে জরুরী মনে করা হয়।
  • আকিকা উপলক্ষে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীকে দাওয়াত খাইয়ে তাদের থেকে বিভিন্ন হাদিয়া কিংবা কাপড় চোপড় টাকা পয়সা ইত্যাদি নেওয়া ও দেওয়া সুন্নাত মনে করা।
  • আকিকার পশুর মাথা ও হাড়ভাঙ্গা যাবেনা এবং পশুর রক্ত নবজাতকের গায়ে মাখাতে হবে।
  • আকিকা উপলক্ষে নাচ গান ইত্যাদির আয়োজন করা
  • আকিকার গোস্ত মাতা পিতা নানা নানি খেতে পারবে না এ ধরনের বিশ্বাস রাখা এগুলি সব কুসংস্কার এগুলো থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জরুরী।

আকিকার পশুর চামড়ার হুকুম

আকিকার পশুর চামড়া কি করতে হবে তা নিয়ে অনেকের মনের সংশয় দেখা দেয়। এমনকি অনেকে আকিকার চামড়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন যে এটা কি করব? যাই হোক, আকিকার পশুর চামড়ার হুকুম
সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।। 
আকিকার নিয়ম অনুসারে আকিকার পশুর চামড়া নিজের ব্যবহার করতে পারবে কিংবা হাদিয়া হিসেবে অন্যকে দিতে পারবে। কিন্তু বিক্রি করতে পারবেনা। তবে যদি আকিকার চামড়া বিক্রি করে দেওয়া হয় তাহলে বিক্রিত অর্থ সদকা করে দিতে হবে। 

শেষ কথা

আপনি যদি প্রথম থেকে সম্পূর্ণটিকে একটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আকিকার নিয়ম এবং আকিকার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। কেননা আকিকার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url