কসর নামাজের নিয়ম | kosor namaz

কসর নামাজের নিয়ম জেনে রাখলে আপনি মুসাফির অবস্থায় আদায় করতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনি কসর নামাজের নিয়ম জেনে না রাখেন তাহলে কিন্তু সঠিকভাবে কসর নামাজ আদায় করতে পারবেন না। যাই হোক নিচে, কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

উপস্থাপনা

আল্লাহ তাআলা  বান্দাকে তার ইবাদত করার আদেশ করেছেন এবং ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়মে শিথিলতা দিয়েছেন। কসরের নামাজ তার মধ্য থেকে অন্যতম একটি। কছর শব্দটি আরবি। এর অর্থ হল খাটো করা। মূলত মুসাফির সফর অবস্থায় সংক্ষিপ্তভাবে যে নামাজ পড়া হয়, তাকে কসর নামাজ বলে। 

সফর অবস্থায় মানুষের কষ্ট ক্লেশের দিকে লক্ষ্য করে নামাজের মধ্যে কসর করা এবং রোজা ভাঙ্গার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। 

কসর নামাজের দূরত্ব

কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে কসর নামাজের দূরত্ব সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা আপনি যদি গোসল করার মতো দূরত্বে না পৌঁছান, সে ক্ষেত্রে কিন্তু কসর নামাজ পড়তে পারবেন না। যাইহোক আসেন দেখে নেয়া যাক, কসর নামাজের দূরত্ব কত?

কসর নামাজের দূরত্ব নির্ধারণ করতে গিয়ে বর্তমানে ফুকাহায়ে কেরাম মাইল হিসাবে ৪৮ মাইল এবং কিলোমিটার হিসেবে প্রায় ৭৮ কিলোমিটার নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি ৭৮ কিলোমিটার কিংবা এর চেয়ে বেশি দূরে যাওয়ার নিয়তে বাড়ি থেকে বের হয়, সেক্ষেত্রে সে মুসাফির বলে গণ্য হবে।
আর এই কারণেই নিজ এলাকার সীমানা পার হওয়ার পর থেকে সে নামাজ কসর করে পড়তে পারবে এবং প্রয়োজনীয় রোজা ভঙ্গ করতে পারবে। আর যদি ১৫ দিন কিংবা এর চেয়ে বেশি অবস্থানের নিয়ত করে তাহলে সে নামাজ কসর পড়তে পারবে না বরং পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে।

কসর নামাজের বিধান

কসর নামাজের জন্য কসর নামাজের বিধান জানা জরুরী। ফুকাহায়ে কেরামের মতে, সফরে নামাজ কসর করা ওয়াজিব। এর পরিমাণ হল তিন মঞ্জিল। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি সাধারণভাবে মধ্যমপন্থায় হেটে তিন দিনে যতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, এই পরিমাণ সফর করা নিয়তে বাড়ি থেকে বের হলে নামাজ কসর করতে হয়। 

নফল নামাজের কসর আছে কিনা? 
সফর অবস্থায় ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য কোন নফল সময় পেলে পড়বে অন্যথায় না পড়লে সমস্যা নেই। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি সাধারণ অবস্থায় থাকে তাহলে সে অন্যান্য নফল পড়তে পারবে আর যদি গাড়ি কিংবা তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকে তাহলে না পড়লে কোন সমস্যা নেই।

সফর অবস্থায়  পূর্ণ নামাজ পড়া যাবে কি?
যে সকল নামাজে কছর পড়ার বিধান আছে সেসব নামাজ যদি পূর্ণ পরে তাহলে গুনাগার হবে। তবে যদি কোন ব্যক্তি সফর অবস্থায় নামাজ কসর না পড়ে ভুলে পূর্ণ নামাজ পড়ে ফেলে এবং দ্বিতীয় রাকাতে পর আত্তাহিয়াতু পরে তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে দুই রাকাত নফল হয়ে যাবে।

কোন কোন নামাজে কসর হয়

কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। কোন কোন নামাজে কসর হয়? সেই বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেলটির এই অংশে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। কোন কোন নামাজে কসর হয়? তা জানতে নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন। 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্য থেকে তিন ওয়াক্তের নামাজে কসর করতে হয়। আর সেই নামাজগুলো হলো যোহর, আসর এবং এশা এই তিন ওয়াক্তের নামাজে কসর করতে হয়। বাকি ফজর ও মাগরিবের নামাজে কোন কসর হয় না। সুতরাং এই দুই ওয়াক্তের নামাজ স্বাভাবিক নিয়ম পড়তে হবে।

কসর নামাজের নিয়ম

শরীয়তের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি মুসাফির বলে গণ্য হবে সে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাত আদায় করবে। যেমন যোহর, আসর এবং এশার নামাজে চার রাকাত এর স্থানে দুই রাকাত পড়বে। ফজর এবং মাগরিবের নামাজে কসর নেই সুতরাং ফজরের নামাজ দুই রাকাতই পড়তে হবে মাগরিব ও বিতরের নামাজের কসর নেই তাই মাগরিব ও বিতরের নামাজ তিন রাকাত পড়তে হবে।

  • মুসাফির ব্যক্তি যদি ইমাম হয় তাহলে সে জোহরা আছর ও এশারে নামাজ দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেবে মুক্তাদীগণ বাকি দুই রাকাত পূর্ণ করে নিবে।
  • মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম এর পেছনে এক্তেদা করে তাহলে সে ক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে  কসর করা জায়েজ হবে না।
  • মুসাফির ব্যক্তি যদি সফর অবস্থায় কোন নামাজ কাজা করে থাকে এবং বাড়িতে এসে উক্ত কাজা পড়তে চায় তাহলে কসর পড়তে হবে। 
  • মুকিম থাকা অবস্থায় নামাজ কাজা হয়ে গেলে সফরে তা পড়তে চাইলে পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে কসর পড়া যাবে না।

কসর নামাজের মাসআলা

কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও উপরে তুলে ধরা হয়েছে। কসর নামাজ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হবে। আশা করি এই তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি কসর নামাজ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।  তো আসুন দেখে নেয়া যাক, কসর নামাজের মাসআলা সমূহ।  

  • মুসাফিরের উপর জুমার নামাজ ফরজ নয়: তবে যদি জুমার নামাজ আদায় করে নেয় তাহলে জোহরের নামাজ তার জিম্মা থেকে সাকেত হয়ে যাবে। 
  • ১৫ দিনের কম সময় ভ্রমণ করলে কসর করতে হয়: কোন ব্যক্তি যদি কোথাও ১৫ দিনের চেয়ে কম অবস্থানের নিয়ত করে তাহলে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে এবং নামাজ কসর করতে থাকবে। 
  • চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হয়: কোন ব্যক্তি যদি ১৫ দিন অথবা এর চেয়ে বেশি কোথাও অবস্থানের নিয়ত করে, তাহলে সে আর মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে না এবং নামাজও কসর করতে পারবে না।
  • নিয়ত ঠিক করা: কোন ব্যক্তি যদি কোথাও ১৫ দিনের চেয়ে বেশি থাকার নিয়তে অবস্থান করে অথবা অন্যজনের পূর্বে পূর্বে সেখান থেকে স্থানান্তর হওয়ার ইচ্ছা করে তবুও সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে না এবং নামাজ পড়তে পারবে না। কিন্তু যদি সেখান থেকে তিন মঞ্জিল সফর করার উদ্দেশ্যে অন্যত্র যায় তাহলে কছর করতে পারবে।
  • ১৫ দিনের অধিক সময় ভ্রমণ করলে কসর করতে পারবেনা: কোন ব্যক্তি যদি বাড়ি থেকে তিন মঞ্জিল সফর করার ইচ্ছে করে এবং ঘর থেকেই এ নিয়ত করে যে, ওমুক গ্রামে ১৫ দিন অবস্থান করবো তাহলে সে কসর করতে পারবে না। যদিও সে ওই গ্রামে ১৫ দিন অবস্থান না করে।
  • ১৫ দিন পূর্ণ না হলে কসর করতে থাকবে: কোন ব্যক্তি যদি রাস্তায় কয়েক জায়গায় অবস্থানের ইচ্ছা করে ১০ দিন এখানে ৫ দিন সেখানে ১২ দিন সেখানে কিন্তু কোথাও পুরনো ১৫ দিন না হয় তাহলে সে মুসাফির থাকবে এবং নামাজও কসর করবে।
  • ঘর জামাই থাকলে কসর করা যাবে না: বিবাহের পরে যদি কোন মহিলা স্থায়ীভাবে নিজের শশুর বাড়ি থাকে তাহলে তার জন্য নামাজ কছর করা জায়েজ নেই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url