আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা | আমাশয় হলে করণীয় | আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা।
সূচি নির্দেশনা

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজে আপনি আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আপনি যদি আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা করতে চান, তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

এই আর্টিকেলটিতে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তাই নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতি সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করেন তাহলে, আশা করি আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে অল্প সময়ের মধ্যেই রোগমুক্ত হতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক, আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা । 

  • থানকুনি পাতা: থানকুনি পাতা আমাশয় রোগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘরোয়া ঔষধ। সঠিক নিয়মে যদি আপনি থানকুনি পাতা খেতে পারেন, তাহলে তা আপনার আমাশয় জনিত সমস্যা দূর করবে। আপনার যদি আমাশয়ের সমস্যা থাকে তাহলে নিয়মিত কিছুদিন সকালবেলা থানকুনি পাতার রস পানির সাথে মিশ্রিত করে খেতে হবে। এভাবে কয়েকদিন খেলে আশা করা যায় আমাশয় এর মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
  • মেথি: আমাশয় নিরাময় করার আরেকটি প্রাকৃতিক উপায় হল মেথি। রান্নাঘরে থাকা সহজলভ্য এই উপাদানটি আমার আমাশয় নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক নিয়মে যদি আপনি মেথি খেতে পারেন, তাহলে আশা করা যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন অল্প কিছু মেথি বেটে রস করে খেতে পারেন।
  • হরিতকি: নিয়মিত কিছুদিন হরিতকি খেলেও আমাশয়ের সমস্যা দূর হয়ে যায়। হরিতকী রস করে খেলে বা গুড়া করে খেলেও তা আমাশয় নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং আমার নিরাময় করতে হরিতকি খেতে পারেন।
  • পেয়ারা পাতা: যেকোনো ধরনের আমাশয় নিরাময় করতে পেয়ারা পাতা খুবই কার্যকর। পেয়ারা গাছের কচি পাতা বেটে রস করে খেলে অভূতপূর্ব ফলাফল পাওয়া যায়। মানুষ কিংবা গরু-ছাগল যে কোন প্রাণীর আমাশয় রোগে পেয়ারা পাতার উপকারিতা সর্বজন স্বীকৃত। সুতরাং কোন ধরনের ঔষধপত্র ছাড়াই যদি আপনি আমাশয় নিরাময় করতে চান, তাহলে পেয়ারা গাছের কচি পাতা খেতে পারেন।
  • ডালিম গাছের খোসা: নতুন এবং পুরাতন উভয় ধরনের আমাশয় দূর করার জন্য ডালিম গাছের খোসা কার্যকর একটি ভেষজ ঔষধ। আপনি যদি আমাশয় থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পেতে চান,  তাহলে নিয়মিত কিছুদিন ডালিম গাছের খোসা খেতে হবে। 

আমাশয় হলে করণীয়

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি সমূহ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে আমাশয় হলে করণীয়
কাজ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।  চিকিৎসা করার পাশাপাশি যদি আপনি নিম্ন বর্ণিত কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারেন তাহলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারবেন। 

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে: আমাশয় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, তাই শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ করতে অবশ্যই আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আমাশয় রোগের ক্ষেত্রে যদি আপনি প্রচুর পরিমাণে পানি পান না করেন, তাহলে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করুন: আপনার যদি আমাশয় জনিত সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সব ধরনের মসলা যুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। কেননা আপনি যদি মসলাযুক্ত খাবার পরিহার না করেন, তাহলে ঔষধ আপনার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। তাই যদি আপনি আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করুন। 
  • ডাবের পানি করুন: আপনার যদি আমাশয়ের সমস্যা থাকে তাহলে ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাবের পানি খেলে তা আমার শরীর নিরাময় করতে সাহায্য করে ঔষধ সেবন করার পাশাপাশি ডাবের পানি সেবন করলে দ্রুত আমার সাথে থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পরিহার করুন: আমাশয়ের রোগীদের জন্য মুক্তি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সব ধরনের কাছে পরিত্যাগ করতে হবে। একান্তই যদি ক্যাফেইন যুক্ত পানিও পান করতে হয় সেক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে পান করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন: দ্রুত আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করেন তাহলে অল্প সময়ের মাঝেই আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। সুতরাং আমাশয় থেকে মুক্তি লাভ করার অন্যতম উপায় হল পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করা।
  • তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন: তৈলাক্ত খাবার আমাশয়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আর এ কারণেই আমার সাথে থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইলে সব ধরনের তৈলাক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দিতে হবে। আপনি যদি এতই লাগতো খাবার গ্রহণ করেন পাশাপাশি ঔষধ সেবন করেন, তাহলে আমার শরীর রোগের ঔষধ ততটা কার্যকর হবে না। তাই ঔষধ খাওয়ার পূর্ব শর্ত হলো তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা

আমাশয় রোগের লক্ষণ

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। যাইহোক আমাশয় রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে, যে রক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে ধরে নিতে হবে যে সেই ব্যক্তি আমাশয়ে আক্রান্ত। চলুন দেখে নেয়া যাক, আমাশয় রোগের লক্ষণ সমূহ। 

  • ডায়রিয়া।
  • পেট ব্যথা।
  • পেট কামড়ানো।
  • জ্বর।
  • বমি বমি ভাব হওয়া ও মাথা ঘুরানো।
  • বমি হওয়া।
  • পায়খানার সাথে মিউকাস অথবা রক্ত থাকা।
  • পায়খানায় যেতে যেতে কাপড় নষ্ট হওয়া।
  • ক্ষুধামন্দা।
  • অবসাদ ও দুর্বলতা।

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার পাশাপাশি নিম্ন বর্ণিত খাদ্য সমূহ যদি নিয়মিত খাওয়াতে পারেন তাহলে রোগ নিরাময় করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা নিম্নরূপ। 

  • সাদা ভাত।
  • আলু সিদ্ধ।
  • টোস্ট।
  • মুরগির মাংস।
  • কাঁচকলা।
  • টক দই।
  • সিদ্ধ ডিম।

আমাশয় রোগের ঔষধের নাম

ইতোমধ্যেই উপরে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ তুলে ধরা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার পরেও যদি আপনার রোগ সেরে না যায়, সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শক্রমে যদি আপনি নিম্ন বর্ণিত ঔষধগুলো সেবন করেন তাহলে আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন। 
তবে মনে রাখবেন,  আমাশয়ের ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ সেবন করলে জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই অবশ্যই ঔষধ সেবন করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ঔষধ করার করে সেবন করবেন না। 
  • D-Zole
  • Pronil DS
  • Secnid DS
  • Secnidal DS
  • Secnizol DS
  • Sezol DS

আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উপরে আমাশয় রোগের লক্ষণ সমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আর্টিকেলটির এই অংশে শুধুমাত্র আমাশয় রোগের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আসুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, আমাশয় রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত। 

  • সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন: আপনি যদি অপরিচ্ছন্ন থাকেন, তাহলে কিন্তু খুব সহজেই আপনি আমাশয় রোগে আক্রান্ত হতে পারেন এবং আপনার মাধ্যমে অন্যের মাঝে এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমার সাথে থেকে নিরাপদ থাকতে চাইলে, অবশ্যই আপনাকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  • নিরাপদ পানি পান করুন: পানির মাধ্যমে আমাশয় রোগের জীবাণু একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে। আর তাই অবশ্যই আপনাকে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। যদি এমন কোন জায়গা থেকে পানি আসে যা নিরাপদ নাও হতে পারে, তাহলে অবশ্যই আপনাকে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে। 
  • স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করুন: অবশ্যই আপনাকে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে এবং পায়খানা ব্যবহার করার সময় অবশ্যই স্যান্ডেল পায়ে দিতে হবে। কেননা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা না হলে সেই পায়খানার মাধ্যমেও আমাশয় ছড়িয়ে যেতে পারে। সুতরাং আমার সাথে থেকে নিজেকে দূরে রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করুন।
  • কাঁচা ফল উত্তমরূপে ধুয়ে খান: সম্ভব হলে কাঁচা ফলমূল না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে যদি একান্ত কাঁচা ফলমূল খেতেই হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তা উত্তমরূপে ধুয়ে জীবাণু মুক্ত করে তারপরে খেতে হবে। কেননা আপনি যদি ভালোভাবে না ধুয়ে কাঁচা ফল খেয়ে ফেলেন তাহলে এর মাধ্যমে আমাশয় রোগ ছড়াতে পারে। 
  • খাওয়ার পূর্বে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন: খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে উত্তমরূপে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতেই হবে। হাতে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকে। তাই আপনি যদি হাত না দিয়েই খাবার খান সেক্ষেত্রে আমার রোগের মত আরও বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url