বিজয় দিবস রচনা - বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ

বিজয় দিবস রচনা বা বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ কিভাবে লিখতে হয় তা জানার জন্য নিম্ন বর্ণিত নমুনা বিজয় দিবস রচনা বা বিজয় দিবস অনুচ্ছেদটি অনুসরণ করতে পারেন। থ্যবহুল একটি বিজয় দিবস রচনা বা বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ কিভাবে লিখতে হয় তা নিচে তুলে ধরা হবে।

বিজয় দিবস রচনা - বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ (নমুনা)

বিজয় দিবস রচনা - বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ

ভূমিকা: প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর সারা বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বিজয় দিবস পালন করে থাকে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে অবশেষে ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে বাঙালি জাতির বিজয় লাভ করতে সক্ষম হয়। বাঙালি জাতির সেই বিজয়কে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হয়।

স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতি: বাঙালি জাতি বরাবরই স্বাধীনচেতা। পরাধীনভাবে অন্যের উপরে ভর করে বেঁচে থাকা বাঙালি জাতির স্বভাববিরুদ্ধ। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বড় বড় সব স্বাধীনতার আন্দোলনে বাঙালি জাতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কথা উঠলেই, হাজী শরীয়তুল্লাহ তিতুমীর সহ ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা সেনদের কথা উঠে আসে। তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে বাঙালি জাতিকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য। অর্থাৎ বাঙালি জাতি বরাবরই স্বাধীন থাকতে চেয়েছে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকা বাঙালি জাতি কখনোই পছন্দ করেনি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান (পূর্ব পাকিস্তান সহ তথা বাংলাদেশ সহ) ব্রিটিশ মুক্ত হয়। কিন্তু তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান ব্রিটিশ মুক্ত হলেও পাকিস্তানের রাজধানী সহ গুরুত্বপূর্ণ সকল দপ্তর পশ্চিম পাকিস্থানে থাকায় পূর্ব পাকিস্তান অবহেলিত ও বঞ্চিত ছিল। শিক্ষা ক্ষেত্রে চাকরির ক্ষেত্রে, প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে, এক কথায় সব ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তান ছিল এগিয়ে। আর পূর্ব পাকিস্তান ছিল বঞ্চিত।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: স্বাধীনচেতা বাঙালি জাতি, কোন ধরনের বঞ্চনা মেনে নিতে রাজি ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম প্রতিবাদ শুরু করে ১৯৫২ সালে। কেননা সেই সময় তৎকালীন ক্ষমতাশীল দলের প্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দু ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষ হিসেবে উল্লেখ করে। যা ছিল বাঙালি জাতি হিসেবে চরম অবমাননা কর।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি একটি অনুষ্ঠানে এই ধরনের বক্তব্য দেয়ার পরে এই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীগণ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এবং এই বিক্ষোভ মিছিল এতটাই প্রকট আকার ধারণ করে যে এতে তৎকালীন সময়ের শাসকগোষ্ঠী ভয় পেয়ে যায়। এবং সেই ভীতি থেকেই তারা কারফিউ  করে। কারফিউ জারির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

কিন্তু বাঙালি জাতি, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা দমবার পাত্র ছিল না। জেল, জরিমানা, এমন কি জীবনের ভয় উপেক্ষা করে, চলমান কারফিউ এর মধ্যেই তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সময়ের সামরিক বাহিনী বিক্ষোভ মিছিলে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। ব্রাশ ফায়ারের ফলে সেখানেই রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত সহ আরো অনেকেই প্রাণ হারান। 

ফলে আন্দোলন আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে বাংলাকেও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই যাত্রায় পাকিস্তান রক্ষা পায়। তবে কখনো ই বাংলাদেশ স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়। কেননা ভাষা আন্দোলনের এই ঘটনা বাঙালি জাতির অন্তরে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এবং বাঙালি জাতি পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্তির পন্থা খুঁজতে থাকে। 

স্বাধীনতা অর্জন: ধীরে ধীরে বাঙালি জাতি রাজনৈতিকভাবে এগোতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ১৬২ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০ টি আসনে বিজয় লাভ করে। এবং প্রাদেশিক নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসনে বিজয় লাভ করে। 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় এবং তৎকালীন পাকিস্তান পিপিপির পরাজয়ের মাধ্যমে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাঙালি জাতি একত্রিত হয়েছে। এর পূর্বাভাস তৎকালীন ক্ষমতাসীন পাকিস্তানি দল অনুধাবন করতে পারে এর ফলে তারা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। এর ফলে বাঙালি জাতি ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। এবং পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি যুদ্ধ আবশ্যকীয় হয়ে ওঠে। 
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন যার মাধ্যমে মূলত মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এরপরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বিকাল চারটার সময় তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্য বিনাশর্তে সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে আর তখনই বাঙালি জাতির পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। 

উপসংহার: দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ এই অর্জন শুধু বাঙালি জাতির জন্য গৌরবের নয় বরং তা পুরো বিশ্ববাসীর জন্য গৌরবের। এই যুদ্ধে বিজয় লাভ করার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতির জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং পৃথিবীর মানচিত্র নতুন স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের জন্ম হয়েছে সেই দেশটির নাম হলো "বাংলাদেশ"। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url