একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ থাকতে হয়। নিচে উল্লেখিত একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ যদি কারো ভিতরে থাকে তাহলে সে প্রকৃত দেশ প্রেমিক। শুধু মুখে বললেই দেশ প্রেমিক হওয়া যায়না। চলুন দেখে নেয়া যাক একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ, যা প্রত্যেকটা নাগরিকের অর্জন করা উচিত।

পেজ সূচিপত্রঃ একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ - উপক্রমণিকা

সু নাগরিক মাত্রই দেশ প্রেমিক। দেশ প্রেমিক হওয়ার জন্য সুনাগরিক হতে হবে। একজন সুনাগরিক সবসময় দেশের সার্বিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। রাষ্ট্র তাকে কি দিলো, না দিলো তা সে চিন্তা ভাবনা করে না। বরং সে দেশকে কি দিতে পারল এটাই সব সময় চিন্তা ভাবনা করে।

তাই সুনাগরিকের গুণাবলী অর্জন করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকের কর্তব্য। অবশ্যই একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ থাকতে হবে। এই গুণগুলো যদি কোনো নাগরিকের ভেতরে পাওয়া না যায়, তাহলে সে মুখে যতই বলুক যে আমি দেশ প্রেমিক প্রকৃতপক্ষে সে কখনোই দেশে প্রেমিকা নয়।
এ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের যদি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুনাগরিক হতে পারতো তাহলে দেশে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতো না। শুধু মানুষ নয়, প্রত্যেক প্রাণীই নিজের জন্মস্থান বা নিজের জায়গা কে ভালোবাসে। পাখি সারাদিন আহার করার পর সন্ধ্যাবেলা নিজের নীড়ে ফিরে আসে।

আমরা জানি অতিথি পাখি শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া সহ বরফ বেষ্টিত অঞ্চলগুলো থেকে আমাদের দেশে চলে আসে আবার শীতের শেষে ফিরে যায়। কিন্তু কেন তারা ফিরে যায়? তারা তো সারা বছর তাদের দেশে থাকতে পারেনা, তাহলে আমাদের দেশে থাকতে তাদের সমস্যা কোথায়? এই যে মায়ার টানে নিজ জন্মস্থানে চলে যাওয়া এটাই হচ্ছে দেশ প্রেম। 

স্বভাবগতভাবেই প্রত্যেক প্রাণীর মাঝে দেশপ্রেম থাকে। এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে সকল মানুষের উচিত ছিল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুনাগরিক হওয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রত্যেক মানুষ দেশ প্রেমিক নয়। কিছু মানুষ রয়েছে যারা নিজের স্বার্থের কারণে দেশের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এ ধরনের মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

যাই হোক, প্রকৃত দেশ প্রেমিক এর কি কি গুন থাকা উচিত সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হবে। যারা নিজেকে সুনাগরিক ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে চায় তারা নিচে বর্ণিত একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ অর্জন করার মাধ্যমে প্রকৃত দেশ প্রেমিক হতে পারে। চলুন দেখে নেই একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ, যা প্রত্যেকটা নাগরিকের অর্জন করা উচিত।

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ১

দেশের প্রতি ভালবাসা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার এক হলো দেশের প্রতি ভালবাসা।দেশপ্রেমিক মানে এমন ব্যক্তি যে তার জীবনের চেয়েও দেশকে বেশি ভালবাসবে। দেশের স্বার্থ রক্ষায় নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

দেশের প্রতি ভালোবাসা কতটা গভীর হতে পারে তা নিয়ে দেশে দেশে যুগে যুগে রচিত হয়েছে অনেক গল্প কাহিনী, কাব্য, মহাকাব্য। দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা হচ্ছে একজন দেশপ্রেমিকের সবচেয়ে বড় গুণ। কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে দেশপ্রেমিক হতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ২

দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার দুই হলো দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা। দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা ছড়া দেশকে ভালবাসা যায়না। দেশকে ভালবাসতে হলে তার জনগনকেও ভালবাসতে হবে। যে ব্যক্তি দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে , সেই প্রকৃত দেশ প্রেমিক।

দেশের মানুষ দেশেরই অংশ। জনগণ ছাড়া দেশ হয়না। তাই দেশকে ভালোবাসা মানেই দেশের মানুষেকে ভালোবাসা। প্রত্যেক জাতির ভিতরে ভ্রাতৃত্ববোধ জন্ম নেয় দেশকে কেন্দ্র করে। দেশের মানুষের প্রতি প্রাণের টান প্রকৃত দেশ প্রেমিকরই থাকে। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৩

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার তিন হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। অনেকেই মনে করে থাকে যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কেবলমাত্র সেনাবাহিনীর কাজ। মূলত বিষয়টি তা নয়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা প্রত্যেককে দেশপ্রেমিকের একান্ত কর্তব্য।
দেশ যদি কোন সময় কোন সংকটের মধ্যে পড়ে যায় তাহলে সেটা থেকে পরিত্রাণের উপায় একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক মাত্রই ভেবে থাকবে। এই দায়িত্বটা শুধু মাত্র ক্ষমতাসীন যারা রয়েছে তাদের উপরে ছেড়ে দেবে না বা সেনাবাহিনীর উপরে ছেড়ে দেবে না। তাই একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের অন্যতম একটি গুণ হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেওয়ার মন মানসিকতা থাকা। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৪

আইন মেনে চলা "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার চার হলো আইন মেনে চলা। একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক যাবতীয় আইন কানুন মেনে চলবে। দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ কখনো করবে না। এবং যারা আইন মানতে সচেষ্ট নয় তাদেরকে আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করবে।

সবাই সম্মিলিতভাবে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করলে সেটাই হবে প্রকৃত দেশের সেবা। আইন মেনে চলা একজন নাগরিক, অন্যান্যদের চেয়ে বেশি দেশ প্রেমিক। কেননা, দেশকে ভালবাসে বলেই সে আইন মেনে চলে। তাই আইন মেনে চলা একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের অন্যতম গুন। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৫

দেশের সম্পদ নষ্ট না করা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার পাঁচ হলো দেশের সম্পদ নষ্ট না করা। প্রকৃত দেশ প্রেমিক কখনোই দেশের সম্পদ নষ্ট করতে পারে না। এমনকি অন্য কেউ দেশের সম্পদ নষ্ট করলে তাতে বাধা দেয়া একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক এর অন্যতম গুণ।

দেশের যে কোনো সম্পদ হতে পারে সেটা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি অন্যান্য যে কোন সম্পদ রক্ষা করা প্রত্যেকটি নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য। যে ব্যক্তি এই কর্তব্য পালন করতে সচেষ্ট মূলত সেই দেশ প্রেমিক নাগরিক।

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৬

দুর্নীতির না করা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার ছয় হলো দুর্নীতির না করা। একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক কখনোই দুর্নীতি করতে পারে না। এবং কেউ দুর্নীতি করলে সেটা রুখে দিতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য। যারা গুরুত্বপূর্ণ এই নাগরিক দায়িত্ব পালন করে তারাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক।

দুর্নীতি একটি দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। আর দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা কোন দেশ প্রেমিকের কাজ নয়। তাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক নিজে দুর্নীতি করবে না। এবং অন্যকেউ দুর্নীতি করলে তাতে বাধা প্রদান করবে। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৭

যথাযথভাবে কর প্রদান করা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার সাত হলো যথাযথভাবে কর প্রদান করা। যথাযথভাবে কর প্রদান করলে দেশের সার্বিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। তাই প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের নাগরিকের কর্তব্য হলো রাষ্ট্রীয় সকলকে যথাসময়ে প্রদান করা।

একটি দেশের আয়ের অন্যতম মাধ্যম হলো জনগণের ট্যাক্স। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকার ট্যাক্স আদায় করে থাকে। যার উপরে যতটুকু ট্যাক্স ধার্য রয়েছে সেই ট্যাক্স যথাসময়ে প্রদান করা একজন দেশপ্রেমিকের অন্যতম গুন। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৮

দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি রক্ষা করা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার আট হলো দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি রক্ষা করা। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক কখনোই এমন কোন কাজ করবে না যেই কাজের কারণে তারা দেশের মান সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। 

দেশের সম্মান একজন সুনাগরিকের কাছে সবচেয়ে বড়। তাই সব সময় দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি রক্ষা করতে প্রকৃত দেশ প্রেমিক সচেষ্ট থাকে। দেশে-বিদেশে কেউ দেশকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা বা অপপ্রচার চালালে তার সমুচিত জবাব প্রদান করা একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক এর অন্যতম গুণ।

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ৯

নিজের দেশের সংস্কৃতি রক্ষা করা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার নয় হলো নিজের দেশের সংস্কৃতি রক্ষা করা। ভিন্ন দেশের উদ্ভট সংস্কৃতি রুখে দিয়ে নিজের দেশের সুস্থ সংস্কৃতি লালন করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক' নাগরিকের কর্তব্য। দেশকপ্রেমিক নাগরিক মাত্রই নিজের দেশের সংস্কৃতি কখনো ভুলে যাবেনা।
দেশে-বিদেশে নিজ দেশের সংস্কৃতিকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করা একজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের কর্তব্য। নিজের দেশের সংস্কৃতিকে ভুলে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি গ্রহণ করে কেউ কখনো প্রকৃত দেশ প্রেমিক হতে পারে না।

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণঃ নং - ১০

দেশের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। "একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ" নাম্বার দশ ও সর্বশেষ গুন হলো দেশের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। দেশের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকা প্রত্যেক দেশ প্রেমিক নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য। 

স্ব অবস্থানে থেকে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। যে ব্যক্তি তার এই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয় সেই প্রকৃত দেশ প্রেমিক। সকল নাগরিক প্রকৃত দেশ প্রেমিক নাগরিকে পরিণত হলে দেশে শান্তির সুবাতাস বইবে। 

একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ - শেষ কথা

উপরে একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ বর্ণনা করা হলো। উপরোল্লিখিত এই গুণগুলো যদি কোনো নাগরিক অর্জন করতে সক্ষম হয়, তাহলে সে প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক দেশের সম্পদ। অপরপক্ষে একজন দুর্নীতি পরায়ন নাগরিকদের জন্য কলংক স্বরূপ।

তাই দেশের জন্য অকল্যাণকর এমন সব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা বড় ধরনের অপরাধ। যদি দেশের নাগরিক প্রকৃতপক্ষে সুনাগরিক ও দেশ প্রেমিক হয়ে ওঠে তাহলে দেশটা স্বর্গে পরিণত হবে। আমরা নিজেরা দেশের কল্যাণে সচেষ্ট থেকে প্রকৃত দেশ প্রেমিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করব। এবং অন্য নাগরিক যারা দেশপ্রেমে অগ্রসর নয় তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করব। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url