জানাজার নামাজের নিয়ম | জানাজার নামাজের দোয়া | জানাজার নামাজের নিয়ত | janaja namaz

জানাজার নামাজের নিয়ম জেনে রাখা একান্ত কর্তব্য। কেননা, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার নিকট আত্মীয় জানাজা করা ভালো। আপনি যদি জানাজার নামাজের নিয়ম জেনে না রাখেন, তাহলে কিন্তু জানাযা পড়াতে পারবেন না। যাই হোক নিচে, জানাজার নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো।
সূচি নির্দেশনা

ভূমিকা

এক মুসলমানের অন্য মুসলমানের উপর কিছু অধিকার রয়েছে তার মধ্যে থেকে একটি জানাযা শরিক হাওয়া। কোন মুসলমান মারা গেলে তার কাফন দাফন ও জানাজা সম্পন্ন করা জীবিত মুসলমানদের উপর মৃত ব্যক্তির অধিকার

ইসলামী শরীয়তে এটা জীবিত মুসলমানদের উপর আবশ্যিকপালনীয় ফরজ, তাই কোন মুসলমান মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেলে অবশ্যই তার জানাজা উপস্থিত হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।তবে মুসলিম উম্মাহর ভিতরে কিছু মানুষ এই দায়িত্ব পালন করলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে। 

জানাজার নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। এই আর্টিকেলটিতে জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের দোয়া এবং জানাজার নামাজের নিয়ত তুলে ধরা হবে। তাই যদি আপনি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়েন, তাহলে জানাজার নামাজের নিয়ম জানতে পারবেন। 

জানাজার নামাজের নিয়ম

অন্যান্য নামাজ থেকে জানাজার নামাজ কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। কেননা জানাযার নামাজের কোন ধরনের রুকু এবং সেজদা নেই। রুকু সেজদা ব্যতীত বিশেষ নিয়মে জানাজার নামাজ আদায় করতে হয়। নিচে জানাজার নামাজের নিয়ম বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হলো। 

মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে ইমাম সাহেব মৃত ব্যক্তির সীনা বরাবর দাঁড়াবে এবং মুক্তাদিগণ ইমামের পিছনে দাঁড়াবে অথবা জানাজার নামাজের নিয়ত করব এবং আল্লাহু আকবার বলে কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নাভীর নিচে হাত বাঁধবে অতঃপর ছানা পড়বে। 
এরপর দ্বিতীয় বার আল্লাহু আকবার বলে দরুদ শরীফ পড়বে, তৃতীয় বার আল্লাহু আকবার বলে দোয়া পড়বে, চতুর্থবার তাকবীর তাকবীর বলার পর প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরাবে তারপর বাম দিকে সালাম ফিরাবে। অতঃপর প্রথমে ডান হাত ছেড়ে দেবে পরে বাম হাত ছেড়ে দিবে। 

একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জানাজার নামাজে চার তাকবীর এর মধ্যে শুধু মাত্র প্রথমে আল্লাহু আকবার বলার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে অবশিষ্ট দিন তাকবীর বলার সময় হাত উঠানো যাবে না শুধুমাত্র তাকবির বলতে হবে।

জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি

শাফি মাযহাবের অনুসারীগণ এবং আহলে হাদিসগণ একটু ভিন্নভাবে জানাজার নামাজ পড়ে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে, তাই অনেকেই হানাফী মাজহাব অনুসারে জানাযার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চায়।
 
উপরে উল্লেখিত জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফী মাযহাব অনুসারে তুলে ধরা হয়েছে। তাই আপনি যদি হানাফী মাযহাব অনুসারে জানাজার নামাজ পড়তে চান, সেক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত জানাজার নামাজের নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন। 

জানাজার নামাজের নিয়ত

জানাজার নামাজের নিয়ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা সঠিক নিয়ত ছাড়া ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। তবে নিয়ত মুখে মুখে উচ্চারণ করে পড়তে হবে কিনা? এ বিষয়ে সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। 

কোন কোন ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, নিয়ত সম্পূর্ণ মনের বিষয় তাই মনে মনে নিয়ত করলেই চলবে। পক্ষান্তরে কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামের মতে, জানাজার নামাজের নিয়ত আরবিতে মুখে মুখে উচ্চারণ করতে হবে। আর আরবি না পারলে জানাজার নামাজের বাংলা নিয়ত পাঠ করতে হবে।যাইহোক নিচে আরবি এবং বাংলা জানাজার নামাজের নিয়ত তুলে ধরা হলো। 

জানাজার নামাজের নিয়ত আরবিতে: نويت ان أؤدي لله تعالى اربعه تكبيرات صلاة الجنازه فرض الكفايه الثناء لله تعالى والصلاه على النبي والدعاء لهذا الميت ابتديت بهذا الامام متوجه الى جهه الكعبه الشريفه،

বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ তাকবিরাতি সালাতিল জানাজাতি ফারযিল কিফায়াতি আসসানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াস সালাতু আলান্নাবিয়্যী ওয়াদ দুয়াউ লি হাজাল মাইয়্যিতি মুতাওয়াজ্জ জেহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি।

মৃত ব্যক্তি যদি মহিলা হয় তাহলে লিহাযাল মাইয়্যিতি এর স্থলে লিহাযিহিল মাইয়্যিতি পড়বে। ইমামের জন্য লিহাজাল মাইয়েতের পর এই দোয়া পড়তে হবে।আনা ইমামুল লিমান হাজারা ওয়া মাইয়াহজুরু। যদি কোন ব্যক্তি আরবিতে নিয়ত করতে না পারে তাহলে তার জন্য বাংলাতে নিয়ত করা ও জায়েজ আছে ,বাংলাতে এভাবে নিয়ত করবে।

জানাজার নামাজের বাংলা নিয়ত: আমি চার তাকবীরের সহিত ফরজ কিফায়া জানা জানাযার নামাজ এই ইমামের পিছনে কিবলামুখী হয়ে আদায় করতেছি।

জানাজার নামাজের দোয়া

জানাজার নামাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল দোয়া পাঠ করা। জানাজা নামাজের নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। নিচে জানাজার নামাজের দোয়া তুলে ধরা হবে। চাইলে আপনি নিচে উল্লেখিত জানাজার নামাজের দোয়া দেখে দেখে তা মুখস্ত করে রাখতে পারেন। 

একজন মুসলমান হিসেবে জানাজার নামাজের দোয়া মুখস্ত করে রাখা আপনার উচিত। কেননা আপনি যদি কোন মৃত ব্যক্তির জানাযায়ী উপস্থিত হন সে ক্ষেত্রে আপনাকে জানাযার নামাজের মধ্যে এই দোয়াটি পড়তে হবে। যাইহোক আসুন দেখে নেয়া যাক, জানাজার নামাজের দোয়া। 

জানাজার নামাজের দোয়া: اللهم اغفر لحينا وميتنا وشاهدنا غائبنا وصغيرنا وكبيرنا وذكرنا وانثانا اللهم من احييته منا فاحيه على الاسلام ومن توفيته منه فتوفه على الايمان، (মৃত ব্যক্তি যদি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কিংবা মহিলা হয় তাহলে এই দোয়া পড়তে হয়) 

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া ও মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনসানা আল্লাহুম্মা মান আহ‌ইয়াতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। 

মৃত ব্যক্তি নাবালক হলে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতে হবে: اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطاً , وَّاجْعَلْهُ لَنَا أجْراً وَّذُخْراً , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيْعاً وَّمُشَفَّعاً

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাঝআলহু লানা ফারত্বাও ওয়াঝআলহু লানা আঝরাও ওয়া জুখরাও ওয়াঝআলহু লানা শাফিআও ওয়া মুশাফফাআ।

মৃত ব্যক্তি নাবালিকা হলে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতে হবে: اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطاً , وَّاجْعَلْهَا لَنَا أجْراً وَّذُخْراً , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَفِيْعةً وَّمُشَفَّعةً

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাঝআ'লহা লানা ফারত্বাও ওয়াঝআ'লহা লানা আঝরাও ওয়া জুখরাও ওয়াঝআ'লহা লানা শাফিআ'তাও ওয়া মুশাফফাআতান।

জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি

অন্যান্য নামাজের মত জানাজার নামাজের ফরজ সুন্নত এবং নফল কাজ রয়েছে। আপনি যদি সঠিকভাবে জানাযার নামাজ আদায় করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে জেনে নিতে হবে, জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি। নিচে জানাজার নামাজের ফরজ ও সুন্নত কাজসমূহ তুলে ধরা হলো।

জানাজার নামাজের ফরজ দুইটি: 

  • চার তাকবীর: জানাজার নামাজের নিয়ম অনুসরণ করে চারটি তাকবীর দেয়া জানাজার নামাজের অন্যতম একটি ফরজ কাজ। 
  • কিয়াম অর্থাৎ দাঁড়ানো: যদি কোন ব্যক্তি ওজরের কারণে দাঁড়াতে সক্ষম না হয় তাহলে তার জন্য বসে জানাজার নামাজ আদায় করা বৈধ আছে।

জানাজার নামাজের সুন্নত তিনটি:
  • সানা পড়া
  • দুই. দরুদে ইব্রাহিম পড়া
  • মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।

জানাজার নামাজ সহিহ হওয়ার  শর্ত সমূহ

জানাযার নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করলেই কেবলমাত্র জানাজার নামাজ শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে। পক্ষান্তরে যদি আপনি নিম্ন বর্ণিতা শর্তসমূহ যথাযথভাবে পালন না করেন তাহলে জানাযার নামাজ বাতিল বলে গণ্য হবে। তো আসুন দেখে নেয়া যাক জানাজার নামাজ শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত। 
জানাজার নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য দুই ধরনের শর্ত রয়েছে। একপ্রকার এমন শর্ত, যা জানাজার নামাজ আদায়কারীর মধ্যে পাওয়া যাওয়া জরুরী যেমন মুসল্লির শরীর, কাপড় পবিত্র হওয়া, স্থান পবিত্র হওয়া সতর ঢাকা নিয়ত করা কিবলামুখী হওয়া। দ্বিতীয় প্রকার শর্ত, যা মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত এ সমস্ত শর্ত ছয়টি।

  • মৃত ব্যক্তি মুসলমান হতে হবে কাফের মুরতাদ এর জানাজা সহিহ হবে না।
  • মৃত ব্যক্তির শরীর নাজাসাতে হাকিকিয়া ও নাজাসাতে হুকমিয়া থেকে পবিত্র হতে হবে।
  • মৃত ব্যক্তির সতর ঢাকা থাকতে হবে উলঙ্গ মাইয়েতের  জানাজা শুদ্ধ হবে না।
  • মৃত ব্যক্তি, জানাজার নামাজ আদায় করি মুসল্লিদের সামনে থাকতে হবে, জানাজার খাটিয়া মুসল্লিদের পিছনে থাকলে জানাজার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
  • মৃত ব্যক্তি অথবা জানাজার খাটিয়া মাটির সাথে সংলগ্ন থাকতে হবে যদি মাটির সাথে সংলগ্ন না থাকে যেমন কোন আরোহীর উপরে কিংবা মানুষের হাতের ওপরে থাকে তাহলে জানাজার নামাজ শুদ্ধ হবে না। তবে যদি কোন ওজরের কারণে এমনটা হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই।
  • জানাজার স্থলে মৃত ব্যক্তি উপস্থিত থাকতে হবে। যদি অনুপস্থিত থাকে জানাজার নামাজ শুদ্ধ হবে না ।

জানাজার নামাজ সম্পর্কিত কতিপয় জরুরী মাসায়েল

জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের দোয়া এবং জানাজার নামাজের নিয়ত ইতোমধ্যে উপরে তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে জানাজার নামাজ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তো আসুন জেনে নেয়া যাক, জানাজার নামাজ সংক্রান্ত জরুরি মাসালা গুলো। 

  • জানাজার নামাজের চার তাকবীর প্রত্যেক তাকবীর এক এক রাকাতের স্থলাভিষিক্ত সুতরাং কোন একটি তাকবীর ফ‌উত হয়ে গেলে জানাজার নামাজ হবে না।
  • দাঁড়াতে সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরজ নামাজ যেভাবে দাঁড়িয়ে পড়া ফরজ, জানাজার নামাজ‌ও দাঁড়িয়ে পড়া ফরজ, বিনা ওজরে জানাজার নামাজ বসে পড়া জায়েজ নেই।
  • জানাযার নামাজে রুকু সেজদা বৈঠক ইত্যাদি নেই।
  • জানাজার নামাজের জন্য কোন সময় নির্ধারিত নেই ,যে কোন সময় পড়া যায় এমনকি আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এবং ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে সূর্য উঠার সময় সূর্য ডোবার সময় এবং দুপুরে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলার সময় জানাজার নামাজ পড়া যাবে না।
  • যদি কোন ব্যক্তির অজু না থাকে এবং ওযু করতে গেলে জানাজা ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তার জন্য তা তায়াম্মুম  করে জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করা জায়েজ আছে।
  • ইমাম এবং মুক্তাদী উভয়ে তাকবীর দোয়া ইত্যাদি পড়বে । মুক্তাদি ও ইমামের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে ইমাম সাহেব তাকবীর‌ও সালাম উচ্চস্বরে পড়বে আর মুক্তাদী আস্তে পড়বে।
  •  ছানা, দরুদ শরীফ, দোয়া, ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে নিচু আওয়াজে পড়বে।

শেষ কথা

উপরে উল্লেখিত জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের দোয়া এবং জানাজার নামাজের নিয়ত জেনে আশাকরি উপকৃত হতে পেরেছেন। কেননা, কার কখন মৃত্যু হবে তাকে বলতে পারেনা। তাই আপনি যদি জানাজার নামাজের নিয়ম তাহলে যে কোন সময় দেখা যায় রাখতে পারে। 
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। তথ্যবহুল এই আর্টিকেল আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। এতে করে অন্যরাও জানাজার নামাজের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url