কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ | কোরবানির ইতিহাস

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আনন্দোৎসব দুটির অন্যতম একটি হচ্ছে কোরবানির ঈদ। এই ঈদে যেহেতু পশু কোরবানি দেওয়া হয়, তাই অনেকেরই কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ জানার প্রয়োজন পড়ে। নিচে কোরবানির ইতিহাস, কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সহ দেওয়া হল।

পেজ সূচিপত্রঃ কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ | কোরবানির ইতিহাস

ভূমিকা

ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ, ঈদুল ফিতরের পরে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এই দিন সারা বিশ্বের মুসলমানেরা পশু কোরবানি করে থাকে। বছরে যেহেতু একবার এই উৎসব পালন করা হয় তাই কোরবানির নিয়ম-কানুন, কোরবানির দোয়া, ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেক সময় আমরা ভুলে যাই।তাই কোরবানির পূর্বেই আমাদের কোরবানির নিয়ম কানুন কোরবানির দোয়া ঝালিয়ে নেওয়া উচিত।

সেই লক্ষ্যেই আপনার জন্য কোরবানির নিয়ম-কানুন এবং কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সহ নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেখি নেই কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ। তবে নিয়মকানুনগুলো দেখার পূর্বে কোরবানির ইতিহাস এক নজরে দেখে নিন। কেননা মুসলিম হিসেবে আপনার উচিত কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে জানা।
কেন কুরবানীর বিধান দেওয়া হলো? বা কোথা থেকে কুরবানীর বিধান আসলো? সম্পর্কে জানা থাকা অবশ্যই ভালো। নিচে খুব সংক্ষেপে কুরবানীর ইতিহাস তুলে ধরা হবে। পুরো লেখাটা ভালোভাবে পড়লে কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা পাবেন।এবং সঠিক নিয়মে কোরবানি কিভাবে করতে হয় সেটাও জানতে পারবেন আর সাথে উল্লেখ করা হবে, কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ। 

কোরবানির ইতিহাস

"কোরবানি" শব্দটি মূলত আরবি শব্দ এই শব্দের শাব্দিক অর্থ হলোঃ উপঢৌকন, হাদিয়া,  উৎসর্গ, ত্যাগ  ইত্যাদি। পরিভাষায়, "পবিত্র জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিন সমূহের মধ্য থেকে যে কোন দিনে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে চতুষ্পদ প্রাণী কে জবাই করাই হল কোরবানি।" প্রকৃতপক্ষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের মধ্যকার পশুকে নিষ্ক্রিয় করাই হলো, কোরবানির প্রধান একটি শিক্ষা। 

একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে কোরবানি নতুন কোন বিষয় নয়। পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকেই কোরবানি করার প্রথা প্রচলিত ছিল। পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর দুই পুত্রের ব্যাপারে কোরবানির যে ঘটনা সেটা আমরা  অনেকেই কমবেশি জানি। 

কিন্তু কোরবানির নির্দিষ্ট বিধি-বিধান ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে বলে ইতিহাসে বর্ণিত রয়েছে। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম,  স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তার পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানি করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন, সেখান থেকেই মূলত কুরবানী করার ধারণা বিস্তৃতি লাভ করে।

এবং পরবর্তীতে ইসলামেও এই বিধানটি প্রচলিত হয়। এই ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে নির্দেশ প্রদান করা হয়। পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে কুরবানীর বিধান ফরজ করা হয় (সূরা কাওসার, আয়াত ২–৩)। এছাড়া এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। যেমন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, 

কোরবানি হলো আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সুন্নত। প্রখ্যাত সাহাবী জায়েদ ইবনে আকরাম থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর নিকট নিবেদন করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরবানি কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সুন্নত হচ্ছে কোরবানি।

কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ এবং কোরবানির নিয়ম

কোরবানির পশু কিভাবে জবাই করতে হবে? সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। কে কুরবানী দিলে ভালো হয়? কোন সময় কোরবানি দেওয়া যায়? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাম সর্বদা নিজ হাতে কোরবানি করতেন। তাই নিজের কোরবানি নিজে করা উত্তম।
কিন্তু কেউ যদি নিজে কুরবানী করতে ইচ্ছুক না হয় তাহলে তিনি অন্য যে কাউকে দিয়ে (অবশ্যই মুসলিম হতে হবে) কোরবানি করিয়ে নিতে পারেন। যেহেতু নিজ হাতে কোরবানির পশু জবাই করা উত্তম তাই আপনি চেষ্টা করবেন নিজেই কোরবানি করতে।

নিচে কোরবানির নিয়ম খুব সহজভাবে তুলে ধরা হলোঃ
কোরবানির শুরুতে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো, পশু কোরবানি করানোর জন্য যখন ভূপাতিত করা হবে, তখন নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হয়। তবে যদি কেউ এই দোয়াটি পাঠ না করে শুধু বিসমিল্লাহ বলে কোরবানি করে তবুও কোন সমস্যা নেই কোরবানি হয়ে যাবে।

  • কোরবানির দোয়া আরবী - ১ 
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

কোরবানির দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ  
ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

  • কোরবানির দোয়া আরবী - ২
উপরে বর্ণিত বড় দোয়াটি যদি কেউ করতে না পারে তাহলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করলেও চলবে। 
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

  • কোরবানির দোয়া আরবী - ৩
যদি কেউ নিজেই নিজের পশু কোরবানি করতে চায় তাহলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে। 
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

বাংলা উচ্চারণঃ  'আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'

পশু জবাই করার সময় আরেকটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আর সেটি হলো, পশুর শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালীর সহ দুই পাশের বড় রক্তনালী দুটো কেটে দিতে হবে। কেননা সেই নালী  দুটো পুরোপুরি ভাবে না কাটলে পশুর শরীরের রক্ত বের হতে সমস্যা হয়, আর পশুর শরীরের রক্ত পুরোপুরিভাবে না হলে সেটা বিশুদ্ধ হয় না।

পশু জবাই করার জন্য যে ছুরি টি ব্যবহার করা হবে সেটা অবশ্যই ধারালো হতে হবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে পশু কোরবানি করা সমীচীন নয়। তাই পশু কোরবানির পূর্বে অবশ্যই ছুরি ভালোভাবে ধার দিতে হবে।এবং পশুকে কোরবানি দেওয়ার সময় অবশ্যই বাম দিকে শোয়াতে হবে তাহলে পশ্চিম দিকে মাথা থাকবে।

  • কোরবানির দোয়া আরবী - ৪
যদি নিজের পশু জবাই করতে সমর্থ না হয়, তাহলে যিনি পশু জবাই করবেন তিনি নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবেন। 
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'

উপসংহার

উপরে কোরবানির ইতিহাস এবং কোরবানির দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, পুরো আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ সহকারে করে থাকেন তাহলে ইতোমধ্যেই আপনি,  কোরবানির দোয়া আরবী শিখতে পেরেছেন। এখানে যে সকল নিয়ম কানুন বর্ণনা করা হয়েছে কোরবানি করার সময় অবশ্যই এ সকল নিয়ম কানুন পুরোপুরি ভাবে অনুসরণ করতে হবে।
কেননা সামান্য ভুলের কারণে আপনার মূল্যবান কোরবানিটি বিনষ্টহয়ে যেতে পারে। তাই কোরবানি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। তারা যদি আপনার মাধ্যমে একটি ভালো কাজ করতে পারে বা শিখতে পারে তাহলে এটি আপনার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url