জিলহজ মাসের আমল | জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত

জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত প্রত্যেক মুসলমানের জেনে রাখা উচিত। তাই অসীম বরকত ও ফজিলতপূর্ণ এই মাসের আমল গুলো সম্পর্কে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আজকের এই আর্টিকেল।চলুন জেনে নেই জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে।
সূচি নির্দেশনা

জিলহজ মাসের আমল | জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলতঃ ভূমিকা

জিলহজ মাস আরবি মাস সমুহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ হল হজ। আর এই হজের জন্য নির্ধারিত মাস হলো জিলহজ মাস। অর্থাৎ এ মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে হজ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই এই মাসটি মুসলিমদের নিকটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার মাস।

মুসলিমদের ২ টি সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম একটি হলো কোরবানির ঈদ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা কোরবানি ঈদে কোরবানি করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কোরবানির এই আমলটি জিলহজ মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে সম্পাদন করা যায় না। আর এ কারণেই জিলহজ মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি।

নিচে জিলহজ্জ জিলহজ মাসের আমল  বা মাসের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।নিম্নে বর্ণিত আমলগুলো যদি আপনি, সঠিক সময়ে আদায় করতে পারেন, তাহলে আপনি অশেষ সওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক জিলহজ মাসের আমল | জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলগুলোকে, ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ দ্বীন রক্ষার স্বার্থে "জিহাদ" করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে হাদীসে এসেছে-

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন এই দিনগুলোর (জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন) আমলের যে মর্যাদা রয়েছে তা অন্য কোন সময়ের আমলের নেই।সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সালাম উত্তরে বললেনঃ জিহাদও নয়।তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি।’ (সহি বুখারী)
জিলহজ্ব মাসের মর্যাদা পূর্ণ হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ সেটি হলোঃ এ মাসেই ইয়াওমুল আরাফা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হজ্জের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আরাফার দিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। যদি কোন ব্যক্তি আরাফার ময়দানে উপস্থিত হতে না পারে তাহলে তার হজ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং পরবর্তীতে আবার আদায় করতে হবে।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ১

পবিত্র হাদিস গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অর্থাৎ কুরবানীর সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত যদি কেউ রোজা পালন করে বা অন্যান্য আমল করে, তাহলে সেই আমলগুলো অন্য সময়ের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ।

আর এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনগুলোতে রোযা রাখতেন। অর্থাৎ মাসের প্রথম দশ দিন রোজা রাখা জিলহজ্ব মাসের আমল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। তাই আমাদের উচিত এই আমলগুলো করা।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ২

এই মাস যেহেতু হজ্জের মাস তাই এ মাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আমলটি হল পবিত্র হজ পালন করা।যার সামর্থ রয়েছে তাকে অবশ্যই এই মাসে হজ পালন করতে হবে। যদি সামর্থ্য থাকার পরেও কোন ব্যক্তি হজ পালন না করে তাহলে সে গুনাহগার হয়ে যাবে। তাই যাদের সমর্থ রয়েছে অবশ্যই তাদেরকে পবিত্র এই মাসে ইসলামের অন্যতম বিধান হজ্জ আদায় করতে হবে।

সমর্থন না থাকার পরেও যদি কোন ব্যক্তি, হজ পালন করে তাহলে সে অধিক সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হবে। তাই পর্যাপ্ত সম্পদ থাকলে, কৃপণতা না করে হজ করাই হবে প্রকৃত মুসলমানের কাজ।অন্যথায়, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৩

এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হলোঃ কোরবানি করা। যাদের সামর্থ্য রয়েছে বা যাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে গেছে তাদেরকে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে। যাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকবে অর্থাৎ তাদের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সম পরিমাণ হয়, তাহলে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে।

সামর্থ্য থাকার পরেও যদি কোন ব্যক্তি কোরবানীর না করে, তাহলে সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যক্তির সামর্থ্য না থাকে, এরপরেও কুরবানী করে তাহলে সে অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবে।তাই অবশ্যই কোরবানির করার ব্যাপারে আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে। 

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৪

পবিত্র জিলহজ মাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আরাফার দিন। আর তাই এই দিনে রোযা রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। পবিত্র হাদীছে ৯ জিলহজ রোজা রাখার ব্যাপারে অনেক মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

"যে ব্যক্তি আরাফার দিনের রোজা রাখবে, তার পূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের সকল গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন।" তাই ৯ জিলহজ আরাফার দিন রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমরা  ৯ জিলহজ আরাফার দিন রোজা রাখার চেষ্টা করব।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৫

যখন জিলহজ মাস শুরু হয়ে যাবে, অর্থাৎ জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর কোরবানি সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত চুল, গোঁফ, হাত এবং পায়ের নখ না কাঁটা। কেননা যদি কোন ব্যক্তি এই জিনিসগুলো না কেটে কোরবানির নিয়তে রেখে দেয় এবং কোরবানির সম্পন্ন হওয়ার পর করে তাহলে সে কোরবানির সওয়াব পাবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে এসেছে,
হযরত উম্মে সালমা(রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে, তখন যদি তোমরা কোরবানি করার ইচ্ছা কর, তাহলে সে যেন তার চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাক।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৬

জিলহজ মাসের রোজা রাখার মর্যাদা সম্পর্কে কিছু পরিমাণ বলা হয়েছে। জিলহজ মাসের রোজা রাখার নিয়ম হলোঃ জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন রোযা পালন করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা পালন করতেন। শুধু ঈদের দিন ব্যতীত। সুতরাং কেউ যদি জিলহজ মাসের রোজা পালন করতে চায় তাহলে তার কঠিন হবে ভারতের প্রথম দশ দিন রোযা পালন করা।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৭

৯ জিলহজ দিবাগত রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি রাত। মুসলমানদের উচিত এই রাতে বিভিন্ন ধরনের আমল করা। আমরা অনেকেই ৯ জিলহজ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত নই। শবে কদর বা অন্যান্য রাত সম্পর্কে জানি। কিন্তু ৯ জিলহজ যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, আমরা অনেকেই তা জানিনা। যাই হোক আমাদের উচিত ৯ জিলহজ দিবাগত রাতে আমল করা।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৮

জিলহাজ মাসের আরেকটি এমন হলোঃ পাঁচদিন আইয়ামে তাশরীক পালন করা। আইয়ামে তাশরীক হলোঃ ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ ই জিলহজ আসরের নামাজে পর্যন্ত, প্রত্যেক নামাযের পরে "আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওলিল্লাহিল হামদ।" এই দোয়া পাঠ করা।  (তাবারানী মুজামে কাবীর: হাদিস: ৯৫৩৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: হাদিস: ৫৬৭৯)

পুরুষেরা নামাজের পর এই দোয়াটি উচ্চস্বরে পড়বে, আর নারীগণ এই দোয়াটি নামাজের পরে নিচে নিচু স্বরে পড়বে। যেন অন্য কোন মানুষ অর্থাৎ অন্য কোন গায়রে মাহরাম তাদের শুনতে না পায়।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ৯

দান সদকা সহ অন্যান্য নফল আমল বেশি বেশি করে করা। কেননা এই মাসের নফল নামাজ অন্য মাসের নফল আমলের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন, " আল্লাহর নিকটে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের নেক আমলের চেয়ে, অধিক প্রিয় অন্য কোন দিনের আমল আর নেই" (বুখারী শরীফঃ ৯৬৯)

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত - ১০

জিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমার গুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি আমল হলো ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা। ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করার জন্য নির্ধারিত মাস হলোঃ জিলহজ মাস।যেহেতু এই মাসে ঈদুল আযাহা অনুষ্ঠিত হয় তাই, ঈদুল আযহার নামাজ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার নিয়ম হলোঃ সকাল বেলায় আদায় করা। ঈদুল আযহার নামাজ একটু তাড়াতাড়ি আদায় করা ভালো। কেননা, ঈদুল আযহার নামাজের পর কোরবানির বিষয় থাকে। তাই দেরিতে নামাজ আদায় করলে কোরবানি করতে বিলম্ব হয়।

জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলতঃ উপসংহার

উপরে জিলহজ মাসের আমল |  জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি উপরোল্লেখিত আলোচনাগুলো আপনার উপকারে আসবে। উপরে যে সকল আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আপনি যদি সে আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনি অনেক সওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন।
জিলহজ মাসের আমল গুলো জেনে আমাদের উচিত সে আমল গুলো পালন করা। কেননা ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে যেহেতু আমরা কেউই চিরজীবন বসবাস করতে পারব না, তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আর জিলহজ মাস হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার অন্যতম একটি উপলক্ষ। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url