জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম | অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম | ভূমি উন্নয়ন কর

জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম খুবই সহজ। অল্প সময়ের মধ্যে আপনি নিজে নিজে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন এর মাধ্যমে কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে খুব সহজেই জমির খাজনা দিতে পারবেন। আর আপনি যদি ঘরে বসে, জমির খাজনা দিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জানতে হবে। পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগের সহিত পড়লে, জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্র

খাজনা কাকে বলে

ভোগ দখলকৃত জমির উপরে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত যে কর রয়েছে তাকেই খাজনা বলা হয়। জমির ধরনের উপরে কর প্রদানের হার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণে কর প্রদান করতে হবে কর প্রদান না করলে সরকার আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তাই নির্দিষ্ট সময়ে খাজনা প্রদান করার চেষ্টা করবেন। কিভাবে খুব সহজেই আপনি আপনার জমির খাজনা দিতে পারেন তার উপায় নিচে তুলে ধরা হবে। 
জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম বা অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই আপনি যদি, জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম বা অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সহিত পড়ুন। নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনি খাজনা প্রদান করতে পারবেন। 

জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম

জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে একটি বিষয়ে জেনে রাখা ভালো। আর তা হলো আপনি দুইভাবে জমির খাজনা প্রদান করতে পারবেন। আগে শুধুমাত্র ভূমি অফিসে গিয়েই খাজনা প্রদান করা যেত। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই খাজনা প্রদান করা যায়। ভূমি অফিসে গিয়ে কিভাবে খাজনা প্রদান করতে হয় সেই ব্যাপারে সকলেই জানে। কিন্তু অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সকলে অবহিত নয়। 

তাই এ আর্টিকেলটিতে, জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অর্থাৎ অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে নিম্ন বর্ণিত স্টেপ গুলো মনে রাখবেন। কেননা নিচে যেভাবে, অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম তুলে ধরা হবে সেগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনি আপনার জমির খাজনা প্রদান করতে পারবেন। 

অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম

বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গিয়েছে। আগে যদি আপনি জমির খাজনা প্রদান করতে ভূমি অফিসে গিয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি জানেন যে, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জমির খাজনা প্রদান করা কতটা কঠিন এবং ব্যয়সাধ্য। 

এই প্রক্রিয়াটিকে সহজ করার উদ্দেশ্যে অনলাইনে জমির খাজনা নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর এ কারণে আপনি খুব সহজেই ঘরে বসেই আপনার মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে, অনলাইনে জমির খাজনা প্রদান করতে পারবেন। 

আপনি যদি নিম্ন বর্ণিত স্টেপগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করেন তাহলে, খুব সহজেই 
অনলাইনে জমির খাজনা প্রদান করতে পারবেন। তো আসুন দেখে নেয়া যাক, অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। 

সর্বপ্রথম আপনাকে এই ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করতে হবে ( https://ldtax.gov.bd/ )। ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করার পরে নিচের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস আপনার সামনে ওপেন হয়ে যাবে। নিচের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন যে "পেমেন্ট করুন" নামের একটি অপশন রয়েছে সেখানে ক্লিক করতে হবে।
পেমেন্ট করুন অপশনটিতে ক্লিক করার পরে নিজের চিত্রের মতো আরেকটি নতুন ইন্টারফেস আপনাদের সামনে ওপেন হয়ে যাবে। সেখানে আপনাকে আপনার যাবতীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।প্রথমে বিভাগ নির্বাচন করতে হবে এরপরে জেলা নির্বাচন করতে হবে। তারপরে আপনাকে উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে। মৌজা নাম্বার সিলেক্ট করতে হবে সবকিছু সিলেক্ট করা হয়ে গেলে হোল্ডিং নাম্বার বসাতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে "অনুসন্ধান করুন" বাটনে ক্লিক করতে হবে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনার যদি হোল্ডিং নাম্বার জানা না থাকে তাহলে স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে তা জেনে নিতে পারেন। 
 "অনুসন্ধান করুন" বাটনে ক্লিক করার পরে, নিচের চিত্রের মতো আরেকটি নতুন চিত্র আপনার সামনে ওপেন হয়ে যাবে। সেখানে আপনি জমির মালিকের নাম দেখতে পাবেন এবং সর্বশেষ কত সালে জমির কর প্রদান করা হয়েছে, তা জানতে পারবেন। এখানে যে সাল উল্লেখ করা হবে সেটি হবে বাংলা সাল। যাইহোক এরপরে আপনাকে "এন.আই.ডি যাচাই" অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। 
 "এন.আই.ডি যাচাই" অপশনটিতে ক্লিক করলে নিচের চিত্রের মত, নতুন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। সেখানে আপনাকে কর প্রদানকারীর মোবাইল নাম্বার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে "পরবর্তী" অপশনটিতে ক্লিক করুন। 
এবার নিচের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন যে, কর প্রদানকারীর নাম পিতার নাম এবং জন্মতারিখ শো করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে "পরবর্তী" অপশনটিতে ক্লিক করুন। 
"পরবর্তী" বাটনে ক্লিক করার পরে নিচের ছবির মত আরেকটি নতুন ইন্টারফেস আপনার সামনে উপস্থিত হবে। দেখতে পাচ্ছেন যে, কর প্রদান করার যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এবং কত টাকা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আপনি যদি চান তাহলে " বিস্তারিত" বাটনটিতে ক্লিক করে আরো বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন। এরপরে "অনলাইন পেমেন্ট" অপশনটিতে ক্লিক করুন। 
নিচের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন যে, আপনাকে কত টাকা কর প্রদান করতে হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোন মাধ্যমে আপনি টাকা পেমেন্ট করতে চান সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। "সকল মালিক" লেখা একটি ড্রপডাউন মেনু দেখতে পাচ্ছেন, চাইলে আপনি সকল মালিক সিলেক্ট করতে পারেন অথবা আপনার নিজের নাম দিতে পারেন। এরপর আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে যে আপনি কোন মাধ্যমে কর প্রদান করতে চান। 
যাইহোক আপনি যদি বিকাশের মাধ্যমে টাকা পে করতে চান তাহলে বিকাশ সিলেক্ট করুন। পেমেন্ট মাধ্যম সিলেক্ট করার পরে নিচের চিত্রের মতো আরেকটি চিত্র আপনার সামনে উপস্থিত হবে। এখানে সকল তথ্য সঠিক থাকলে "ই-পেমেন্ট করুন" অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। 
"ই পেমেন্ট করুন" অপশনটিতে ক্লিক করার পরে নিচের চিত্রের মতো নতুন আরেকটি ইন্টারফেস আপনার সামনে উপস্থিত হবে। যেহেতু আপনি বিকাশ সিলেক্ট করেছেন তাই, এখানে আপনাকে বিকাশ নাম্বারটি প্রদান করতে হবে। আপনার বিকাশ নাম্বারটি প্রদান করুন, এরপরে "কনফার্ম" বাটনটিতে ক্লিক করুন। বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনি যে বিকাশ নাম্বার প্রদান করবেন সেই বিকাশ নাম্বারে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা থাকে, তা না হলে কিন্তু পেমেন্ট করতে পারবেন না। 
কনফার্ম বাটনে ক্লিক করার পরে বিকাশ আপনার নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠিয়ে দিবে।সেই কোডটি আপনাকে নিম্ন বর্ণিত অংশে সাবমিট করতে হবে। ভেরিফিকেশন কোডটি দেখার জন্য আপনার মোবাইলের মেসেজ গুলো চেক করুন। সর্বশেষ যে মেসেজটি দেখতে পাবেন, সেখানে আপনি আপনার ভেরিফিকেশন নাম্বারটি পাবেন। সেই নাম্বারটি এখানে সাবমিট করুন। 
ভেরিফিকেশন নাম্বারটি যদি আপনি সঠিকভাবে সাবমিট করতে পারেন তাহলে নিচের চিত্রের মতো আরেকটি ইন্টারফেস আপনার সামনে ওপেন হবে সেখানে আপনাকে আপনার বিকাশ পিন নাম্বারটি প্রদান করতে হবে। পিন নাম্বারটি প্রদান করার পরে অটোমেটিক ভাবে আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে, খাজনার টাকা কেটে নেবে।

জমির খাজনা চেক | খাজনার রশিদ

আপনি যদি উপর উল্লেখিত প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে অনুসরণ করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি সঠিকভাবে অনলাইন এর মাধ্যমে খাজনা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন কথা হল আপনি যে খাজনা দিয়েছেন তার ডকুমেন্ট কোথায় পাবেন? নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতির অনুসরণ করার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি জমির খাজনা চেক বা খাজনার রশিদ সংগ্রহ করতে পারবেন। তো চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে, জমির খাজনা চেক বা খাজনার রশিদ সংগ্রহ করবেন। 
জমির খাজনা চেক বা খাজনার রশিদ সংগ্রহ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।( https://land.gov.bd/) এই ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার পরে নিচের চিত্রের মত একটি ইন্টারফেস আপনার সামনে ওপেন হবে। সেখানে আপনাকে "ভূমি উন্নয়ন কর" অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। 
"ভূমি উন্নয়ন কর" অপশনটিতে ক্লিক করলে নিচের চিত্রের মতো আরেকটি নতুন ইন্টারফেস আপনি দেখতে পাবেন। সেখানেও আপনাকে "ভূমি উন্নয়ন কর" অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। 
"ভূমি উন্নয়ন কর" অপশনটিতে ক্লিক করার পরে নিচের চিত্রের মত একটি ইন্টারভিউ দেখতে পাবেন। সেখানে দেখতে পাচ্ছেন যে বাম পাশে অনেকগুলো অপশন রয়েছে। সেখান থেকে আপনাকে "দাখিলা" অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। 
" দাখিলা" অপশনটিতে ক্লিক ক্লিক করলে নিচের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। সেখানে মার্ককৃত " বিস্তারিত" বাটনটিতে ক্লিক করুন। 
বিস্তারিত বাটনটিতে ক্লিক করার পরে, নিচের চিত্রের মতো আরেকটি নতুন আপনার সামনে উপস্থিত হবে সেখান থেকে চাইলে আপনি আপনার খাজনার দাখিলা প্রিন্ট করে নিতে পারেন অথবা পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। 

শেষ কথা

আশা করি উপর উল্লেখিত, পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিকভাবে আপনি আপনার জমির খাজনা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছেন। অনলাইনে জমির খাজনা প্রদান করতে গিয়ে যদি কোন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হন তাহলে কমেন্ট করবেন। হেল্প করার চেষ্টা করব। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url