নামাজের নিয়ম | পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম | namaj porar niom

নামাজের নিয়ম সঠিকভাবে না জানলে আপনার নামাজ শুদ্ধ হবেনা। সুতরাং আপনি যদি সহি শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে নামাজের নিয়ম জেনে নিতে হবে। এই আর্টিকেলটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হবে।
সূচি নির্দেশনা

উপস্থাপনা

নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি ফরজ ইবাদত। আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথা সময়ে আদায় করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে এবং এই মর্মে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। 

সুতরাং একজন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবি করে, তাহলে অবশ্যই তাকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেই হবে। পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিঃসন্দেহে তা বড়ই কঠিন- বিনীতদের জন্যে ছাড়া । ( সুরাহ বাকারাহ ২: ৪৫)

অন্য আরেকটি সূর মহান আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন, আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করি (ক্ষমতা ওঁ সম্পদ দ্বারা) তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে, আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর (নিকট) (সুরাহ হাজ ২২:৪১)।

নামাজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে যে সকল হাদিস রয়েছে তার মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস নিচে তুলে ধরা হলো, আমর ইবনে শুয়াইব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্যে আদেশ কর, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছাবে। আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সালাতের জন্যে প্রহার কর এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও। (সুনানু আবী দাঊদ: ৪৯৫)। 

সুতরাং পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে এই কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত এবং সজ্ঞান অবস্থায় কখনোই তা পরিত্যাগ করা যাবে না। যাইহোক, সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার জন্য অবশ্যই আপনাকে, নামাজের নিয়ম কানুন গুলো জেনে নিতে হবে। আপনি যদি নামাজের নিয়ম জেনে নিতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই আর্টিকেলটিতে নামাজের নিয়ম বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নামাজের নিয়ম | namaj porar niom

আপনি যদি নামাজ আদায় করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নামাজের নিয়ম কানুন গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। আর্টিকেলটির এই অংশে নামাজের নিয়ম বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো।
নামাজ হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও রীতিতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং তার কাছে সাহায্য ও ক্ষমা চায়।

নামাজের নিয়মগুলো হল:

  • পবিত্রতা অর্জন করা: নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতীত কখনো আপনি নামাজ পড়তে পারবেন না। আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে পবিত্র থাকেন, অর্থাৎ আপনার উপরে যদি গোসল ফরজ না থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি ওযু করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নামাজে দাঁড়াতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনার গোসল ফরজ হওয়ার অবস্থা থাকে, তাহলে সর্বপ্রথম আগে ফরজ গোসল করে নিতে হবে, এরপরে অজু করে নামাজে দাঁড়াতে হবে।
  • পোশাক পবিত্র হওয়া: নামাজ পড়ার জন্য পোশাক পোশাকের পবিত্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই প্রস্রাব পায়খানা করার পরে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। বিশেষ করে প্রস্রাব করার সময় এমনভাবে প্রস্রাব করতে হবে, যেন প্রস্রাবের ছিটে ফোটা কাপড়ে না লাগে। কেননা প্রস্রাবের ছিটেফোটা কাপড় লাগলে কাপড় অপবিত্র হয়ে যেতে পারে। আর অপবিত্র কাপড় পরিধান করে নামাজ আদায় করা যাবে না। সুতরাং নামাজ শুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে পোশাকের পবিত্রতা জরুরি।
  • নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া: নামাজ শুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে শর্ত হল নামাজের জায়গা পবিত্র হতে হবে। নামাজের জায়গা পবিত্র হলে নামাজ শুদ্ধ হবেনা। আর তাই কোথাও নামাজ পড়ার পূর্বে দেখে নিতে হবে যে, জায়গা পবিত্র কিনা। 
  • নামাজের নিয়ত করা: নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে নামাজের নিয়ত করতে হবে। তবে নামাজের কিভাবে করতে হবে, সেই ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। কোন কোন ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হবে, আর কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামের মতামত হল নিয়ত মনের বিষয় তাই তা মনে মনে করলেই চলবে।
  • কিয়াম করা: কিয়াম করা বা দাঁড়ানো নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আপনি যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। তবে যদি কোন কারনে অসুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে বসে বসে এমনকি শুয়েও নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
  • রুকুর করা: নামাজের মধ্যে রুকু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে রুকুকারীদের ব্যাপারে অনেক ফজিলতের কথা বর্ণনা করেছেন। আপনি যদি নামাজে রুকু না করেন, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তাই আমাদের অন্যতম একটি শর্ত হল নামাজের মধ্যে অবশ্যই আপনাকে রুকু করতে হবে।
  • সিজদা করা: নামাজের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হল সিজদা করা। পবিত্র কুরআনে নামাজকে কখন কখনো কখনো সেজদা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি সিজদা না করেন সে ক্ষেত্রে কিন্তু নামাজ শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে না। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত হলো সিজদা করা।
  • বৈঠক করা: নামাজ শুদ্ধ হওয়ার যে সকল শর্ত রয়েছে সেই শর্ত সমূহের মধ্যে আরেকটি অন্যতম শর্ত হলো নামাজের বৈঠক করা নামাজে বৈঠক না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। 
  • সালাম ফিরানো: আমাদের সর্বশেষ কার্যক্রম হলো সালাম ফেরানো সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করতে হয় তাই সালাম ফিরানোর নামাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম

উপরে উল্লেখিত নামাজের নিয়ম অনুসরণ করেই আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারবেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য আলাদা আলাদা কোন নিয়ম নেই এক নিয়মের সকল নামাজ আদায় করা যায়। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামাজের জন্য শুধু আপনাকে নামাজের নিয়ত পরিবর্তন করতে হবে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম সমূহ যেহেতু ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তা এখানে আর পুনরাবৃত্তি করার কোন প্রয়োজন নেই। পবিত্র কুরআনে ১১৪ টি সূরা রয়েছে, এবং অসংখ্য আয়াত রয়েছে। 

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূরা গুলো পাঠ করার মাধ্যমে এবং সূরার অংশ বিশেষ পাঠ করার মাধ্যমে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। আপনি যদি সূরা কিংবা সূরার অংশবিশেষ মুখস্ত করতে চান সে ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন দেখে দেখে মুখস্ত করে নিতে পারেন। 

নামাজের নিয়ম ও সূরা

তোমার থেকে উপরে বর্ণিত নামাজের নিয়ম এবং সূরা সমূহ যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। নামাজ পড়তে চাইলে অবশ্যই আপনার কিছু সূরা মুখস্ত রাখতে হবে। সূরা মুখস্ত না রাখলে কিন্তু আপনি নামাজ পড়তে পারবেন না। নামাজ পড়ার জন্য পবিত্র কোরআন থেকে ছোট ছোট সূরা বলে মুখস্ত করে নিতে পারেন।

উপসংহার

নামাজের নিয়ম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার কাছে অনেক ভালো লেগেছে যদি এই আর্টিকেলটি প্রকৃতপক্ষে আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সকলের সাথে শেয়ার করবেন। 
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন এবং সেখান থেকে কোন ব্যক্তি যদি নামাজের নিয়ম কানুন জানতে পারে এবং উপকৃত হতে পারে তাহলে আপনিও অশেষ খাওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url