দান করার ফজিলত | দানের ফজিলত

দান করার ফজিলত অনেক বেশি। আপনার সম্পদ থেকে যদি আপনি কিছু অংশ দান করেন তাহলে, আল্লাহতালা সেই সম্পদে বরকত দান করবেন। আর যদি আপনি দান না করেন, তাহলে সম্পদের বরকত কমে যাবে। নিচে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত।
সূচি নির্দেশনা

উপস্থাপনা

আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে আমাদেরকে সম্পর দান করেছেন। কিন্তু এই সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র আমাদেরকে কিছুদিনের জন্য ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই এই সম্পদ অন্যের মালিকানা চলে যায়। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো: আমরা সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় দান ছদকা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

দান করার ফজিলত | দানের ফজিলত

দান করার ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এবং হাদিসে অসংখ্য বিবরণ রয়েছে। দান করার ফজিলত সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের আয়াত সমূহ এবং হাদিস সমুহ নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। তাই দান করার ফজিলত বা দানের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে নিম্নবর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। 

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে পাকের মধ্যে ইরশাদ করেন, قُلْ لِعِبَادِيَ الَّذِيٍنَ آمَنُوْا يُقِيْمُوْا الصَّلٰوةَ وَ يُنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا  بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خِلَالٌ অর্থ: হে নবী আপনি বলুন আমার বান্দাদের যারা ঈমান এনেছে, তারা যেন নামাজ কায়েম করে এবং আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা যেন ব্যয় করে গোপনে এবং প্রকাশ্যে ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন বেচাকেনা থাকবে না এবং না কোন বন্ধু থাকবে। (সূরা ইব্রাহীম আয়াত ৩১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
مثل الذين ينفقون اموالهم في سبيل الله كمثل حبة انبتت سبع سنابل في كل سنبة مائة حبه والله يضاعف لمن يشاء والله واسع عليم،  অর্থ: যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ ওই শস্যের মত। যা সাতটি শিষ উৎপন্ন করে প্রত্যেক শিষে একশটি করে শাখা থাকে, আল্লাহ তাআলা বৃদ্ধি করে দেন যাকে চান এবং আল্লাহ তায়ালা প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা আয়াত ২৬১)

فاتقوا الله ما استطعتم واسمعوا واطيعوا وانفقوا خيرا لأنفسكم  ومن يوق شح نفسه فاولئك هم المفلحون  অর্থ: তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর এবং শোনো ও মান্য কর এবং ব্যয় কর এটা তোমাদের জন্য মঙ্গল এবং যাকে মনের কৃপণতা থেকে রক্ষা করা হয় তারাই সফলকাম (সুরা তাগাবুন আয়াত ১৬)

দান করার ফজিলত ও উপকারিতা

আমাদের অনেক নাফরমানীর কারণ আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর রাগান্বিত হয়, কিন্তু দান সদকা করলে আল্লাহ তাআলার রাগ প্রশমিত হয়। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, إن صدقه السر تطفئ غضب الرب تبارك وتعالى অর্থ: নিশ্চয় গোপনের সদকা আল্লাহ তায়ালার রাগ প্রশমিত করে।

  • দান-সদকে করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, والصدقه تطفئي الخطيئه كما تطفئ الماء النار অর্থ সদকা গুনাকে মিটিয়ে দেয়  যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। দানকারী ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পায়। فاتقوا النار ولو بشق تمره অর্থ: একটি খেজুরের টুকরো দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। 
  • দান করার দ্বারা সম্পদ বাড়ে: আমরা মনে করি যে, দান করলে সম্পদ হ্রাস পায় অথচ দান করার দ্বারা সম্পদ কমেনা বরং বৃদ্ধি পায় عن ابي هريره رضي الله تعالى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما نقصت صدقه وما زاد الله عبدا بعفو الا عزا وما تواضع احد لله الا رفعه الله، অর্থ: সাদকা করার দ্বারা মাল কমে যায় না ক্ষমা করার জন্য মর্যাদা বৃদ্ধি হয় এবং আল্লাহর ওয়াস্তে প্রদর্শনকারীর মর্যাদা আল্লাহতালা বাড়িয়ে দেন।
  • দানকারী কেয়ামতের দিন সদকার ছায়ার নিচে স্থান পাবে: যেদিন আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবেনা।
  • দান সদকার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির রোগ ভালো হয়: মানুষ বিভিন্ন প্রকারের অসুস্থতায় ভোগে এবং অনেক টাকা পয়সা ব্যয় করে কিন্তু রোগ ভালো হয় না তাদের জন্য উচিত আল্লাহর রাস্তায় দান সদকা করা হাদীস শরীফে এসেছে, داووا مرضاكم بالصدقه অর্থাৎ তোমাদের অসুস্থ ব্যক্তিদের কে সদকার মাধ্যমে চিকিৎসা করো।
  • দান সদকা অন্তরের রোগের ঔষধ স্বরূপ: এক ব্যক্তি রাসুল সাঃ এর দরবারে এসে তার অন্তর শক্ত হওয়ার অভিযোগ করল রাসুল সাঃ বললেন, যখন তুমি চাও যে তোমার অন্তর নরম হোক তখন তুমি মিসকিনদের খানা খাও এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
  • দানকারী ফেরেশতাদের দোয়া পায়: হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন যে, প্রতিদিন দুইজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং তারা দোয়া করে যে হে আল্লাহ তুমি দাতাকে বিনিময় দান করো এবং কৃপণকে ধ্বংস করে দাও।

গোপনে দান করার ফজিলত

দান দুইভাবে করা যায়। আপনি প্রকাশ্যেও দান করতে পারেন আবার গোপনেও দান করতে পারেন।তবে গোপনে দান করলে আল্লাহতালা আপনাকে বিশেষ কিছু পুরস্কার দান করবেন। গোপনে দান করলে আল্লাহর নিকটে যে সকল পুরস্কার পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, গোপনে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত। 

আল্লাহ তা'আলা বলেন. ان تبدوا الصدقات فانيعما هي وان تخفوها او تؤتواها الفقراء فهو خير لكم ويكفر عنكم سيئاتكم الله والله بما تعملون خبير ، অর্থ: যদি তোমরা সদকা প্রকাশ করো তবে তা উত্তম এবং যদি তা গোপন করো কিংবা গরিবদের দাও তাহলে তা  ও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহ সমূহ মুছে দিবেন এবং তোমরা যে আমল কর আল্লাহ তাআলা সে ব্যাপারে অবগত আছেন।‍ (সূরা বাকারা আয়াত ২৭১) 
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, الذين ينفقون اموالهم في الليل والنهار سرا وعلانيه فلهم اجرهم عند ربهم ولا خوف عليهم ولا هم يحزنون، অর্থাৎ যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে দিনে ও রাতে গোপনে বা প্রকাশ্যে তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকটে প্রতিদান তাদের কোন ভয় নেই তার কোন চিন্তিত হবে না।

গোপনে দানকারী ব্যক্তি কেয়ামতের ময়দানে আরশের নিচে ছায়া পাবে رجل تصدق بصدقه حتى لا تعلم شماله ما ينفق يمينه এমন ব্যক্তি যে এমন গোপনে সদকা করবে তার বামহাত বলতে পারবে না ডান হাতে কি ছদকা করেছে।

দান করার ফজিলত: দান শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী

১.প্রত্যেক আমলের জন্য নিয়ত শুদ্ধ করা জরুরী। কেননা নিয়ে শুদ্ধ হওয়া ব্যতীত  আল্লাহর নিকট কোন আমলের গ্রহণযোগ্যতা নেই। হাদিস শরীফে এসেছে, انما الاعمال بالنيات انما لكل امرئ ما نوي অর্থ: নিশ্চয় সকল আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করবে তাই পাবে।

সুতরাং দান সদকা ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে তাহলে দান বৃদ্ধি পেয়ে দানকারীর হাতে আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, مثل الذين ينفقون اموالهم ابتغاء مرضات الله وتثبيتا من أنفسهم كمثل جنىة بربوة اصابها وابل فاتت أكلها ضعفين فان لم يصبها وابل فطل والله بما تعملون بصير অর্থ: যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং নিজের মধ্যে পরিপক্কতা আনয়নের জন্য ব্যয় করে তাদের উদাহারণ এরুপ যেমন কোনো টিলার উপরে বাগান রয়েছে, তার উপরে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে, ফলে তা দ্বিগুণ ফল জন্মালো। যদি বৃষ্টি না ও পড়ে হালকা বৃষ্টি যথেষ্ট আর তোমরা যে আমল কর তা আল্লাহ তাআলা ভালোভাবে দেখেন।

২.দান সদকা হালাল সম্পদ থেকে করা হারাম সম্পদ দান করাতে কোন কল্যাণ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, يا ايها الذين امنوا انفقوا من طيبات ما كسبتم ومما اخرجنا لكم من الارض، অর্থ: হে ঈমানদারগণ তোমরা যাহা কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট কিছু অংশ ব্যয় কর।

৩. নিজের পছন্দের জিনিস দান করা।
৪. কল্যাণের  পথে দান করা। কোন গুনাহের কাজে নিজের সম্পদ ব্যয় না করা গুনাহের কাজে অল্প টাকা ব্যয় করাও অপচয়।

৫. সুস্থ সবল অবস্থায় দান করা। হযরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল যে হে আল্লাহর রাসূল কোন দান সবচেয়ে উত্তম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ان تصدق وانت صحيح شحيح تأمل العيش وتخشي الفقرولا تمهل حتى اذا كانت بالحلقوم قلت لفلان كذا ولفلان كذا وقد كان

উপসংহার

দান করার ফজিলত সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আশা করি ইতোমধ্যেই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে দান করার ফজিলত সম্পর্কে উপরে তথ্যবহুল আলোচনা করা হয়েছে। দান করার ফজিলত সম্পর্কিত উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো যদি আপনি যথাযথভাবে অনুসরণ করেন তাহলে, ইহকালে শান্তিতে থাকতে পারবে এবং পরকালে মুক্তি পাবেন। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url