সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে যদি আপনি জেনে রাখেন তাহলে, দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনি সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া রাখেন, তাহলে কিন্তু না জানার কারণে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। 
সূচি নির্দেশনা

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

সিজারের পরে যদি সিজারের জায়গায় ইনফেকশন হয়, তাহলে বিশেষ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেই লক্ষণগুলোর সাহায্যে খুব সহজেই আপনি অনুধাবন করতে পারবেন যে, আপনার সিজারের স্থানে ইনফেকশন হয়েছে কিনা। চলুন দেখে নেয়া যাক, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ।

  • সেলাইয়ের স্থান লাল হওয়া: সিজারের স্থান যদি অত্যাধিক পরিমাণে লাল থাকে, এবং কনকনে ভাব থাকে, তাহলে সেখানে সমক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, এই ধরনের লক্ষণ সাধারণত সংক্রমণের সময় দেখা যায়। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে। 
  • ফুলে যাওয়া: সেলাইয়ের স্থান যদি অধিক পরিমাণে ফুলে যায়, তাহলে তা দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা, সেলাইয়ের স্থান অধিক পরিমাণে ফুলে যাওয়া ইনফেকশনের লক্ষণ। সুতরাং এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়ার পাশাপাশি ব্যথা সহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে, অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 
  • সেলাইয়ের স্থানে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া: সিজারের পর ইনফেকশনের, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণটি হল সেলাইয়ের স্থানে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হওয়া। সিজারের পরে যদি অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে, ইনফেকশন হয়েছে। 
  • সেলাইয়ের স্থান দিয়ে রস বা পুঁজ ঝরা:  সিজারের পর ইনফেকশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল, সেলাইয়ের স্থান দিয়ে রস বা পুঁজ ঝরা। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে, উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কেননা এই ধরনের লক্ষণ ইনফেকশনের চূড়ান্ত অবস্থায় হয়ে থাকে। তাই, এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও যদি আপনি উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করেন, তাহলে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। 
  • জ্বর হওয়া: সিজারের পরে ইনফেকশন হলে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায়, তার মধ্য থেকে অন্যতম একটি হলো জ্বর হওয়া। অন্যান্য উপসর্গের সহিত যদি কন্টিনিউ জ্বর থাকে সেক্ষেত্রে ধরে নিতে পারেন যে, আপনার সিজারের স্থানে ইনফেকশন হয়েছে। 
  • তলপেটে ব্যথা হওয়া: সিজারের পর ইনফেকশন হলে তলপেট ব্যথা করতে পারে। তলপেট সহ কোমর এবং উরু দেশেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং সিজারের পরে তলপেটে অধিক পরিমাণ ব্যথা হওয়া ইনফেকশনের অন্যতম একটি লক্ষণ। 
  • প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া: সিজারের পরে যদি প্রস্রাব করতে অধিক পরিমাণে কষ্ট হয়, তাহলে তা হতে পারে ইনফেকশনের কারণে। তাই, সিজারের পরে প্রস্রাব করতে করতে কষ্ট হলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে? সেই বিষয়ে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। আসুন তাহলে দেখে নেই, সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে?

সফলভাবে সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে গেলে, অপারেশনের তিনদিন পরে রোগীকে রিলিজ দেয়া হয়। অর্থাৎ সিজারিয়ান অপারেশন এর পর তিনদিন পর্যন্ত অত্যধিক পরিমাণে ব্যথা এবং অন্যান্য সমস্যা থাকতে পারে। 
তবে সিজারের ব্যথা দীর্ঘদিন পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে? তার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। অনেক সময় দেখা যায় এনিস্থিসিয়া প্রয়োগ করার কারণে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোমরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। 

তবে যদি সে সিজারের পরে ব্যথা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং অসহ্যকর হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে অতিসত্বর যোগাযোগ করে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। 

সিজারের পর খাবার তালিকা

যেহেতু ইতোমধ্যেই উপরে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ তুলে ধরা হয়েছে, তাই আশা করি সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সময় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটির এই অংশে সিজারের পর খাবার তালিকা তুলে ধরা হবে। 

  • মুরগির মাংস: সিজারের পরে রোগীকে মুরগির মাংস খেতে দেয়া উচিত। কেননা, সিজারের পরে যদি পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুত সেলাই শুকিয়ে যায়। পক্ষান্তরে, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ালে সেলাই শুকাতে অনেক সময় লাগতে পারে, এমনকি সেলাইয়ের সংক্রমণ হতে পারে।
  • গরুর মাংস: সিজারের রোগীকে চর্বিবিহীন গরুর মাংস খাওয়াতে হবে। গরুর মাংসের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং ক্যালসিয়াম থাকায় নিয়মিত গরুর গোশত খেলে। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষত নিরাময় হয়। 
  • মাছ: সিজারের রোগের ক্ষেত্রে মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। নিয়মিত মাছ খাবার অল্প সময়ের মধ্যেই সেলাই শুকিয়ে যাবে। তাই অবশ্যই সিজারের রোগীকে নিয়মিত মাছ খাওয়াতে হবে।
  • শাকসবজি: শাকসবজি ক্ষত নিরাময় করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে, তাই যদি আপনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিজারের ক্ষত নিরাময় ক্ষত নিরাময় করতে চান, তাহলে অবশ্যই রোগীকে নিয়মিত শাক-সবজি খাওয়াতে হবে। 
  • ফলমূল: বিভিন্ন ধরনের ফলমূলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। আর এ কারণেই সিজারের রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাওয়াতে হয়। বিশেষ করে সিজারের রোগীকে ভিটামিন সি জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। কেননা ভিটামিন সি জাতীয় ফল বেশি বেশি খেলে দ্রুত ক্ষত নিরাময় হবে।

সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয় 

উপরে উল্লেখিত, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ যদি কারো মাঝে প্রকাশ পায়, তাহলে এর উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যাইহোক এখন কথা হলো: সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরে নিশ্চয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো। 

সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কেননা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে সিজারের পর অল্প কিছুদিন ব্লিডিং হতে পারে। পক্ষান্তরে কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্লিডিং হতে পারে। 

তবে সাধারণত এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ব্লিডিং হয়ে থাকে। যদি কখনো এর চেয়ে বেশি সময় পর্যন্ত ব্লিডিং অব্যাহত থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কেননা এটা অস্বাভাবিক এবং রোগের লক্ষণ। 

সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়

আপনি যদি উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ জানতে পেরেছেন। যাই হোক নিচে, সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়? সেই বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে। সুতরাং, সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়? সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য পড়তে থাকুন। 
সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়, এর নির্দিষ্ট কোন সময় সীমা নেই। যদি খুব এমার্জেন্সি না হয় সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন মাস কোন জায়গায় জার্নি না করাই ভালো। তবে একান্ত প্রয়োজনে নিরাপদ যানবাহনে জার্নি করা যেতে পারে। জার্নি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সমাধান থাকতে হবে, যেন কোনভাবেই পেটে ঝাকি না লাগে। কেননা, পেটে যদি ঝাকি লাগে সেক্ষেত্রে সেলাইয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url