ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত

ব্লাড ক্যান্সার খুবই মারাত্মক একটি ব্যাধি। তবে 'ব্লাড ক্যান্সার হলে মৃত্যু নিশ্চিত' এই কথাটি শতভাগ সত্য নয়। নিচে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় বা ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার 

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকারঃ উপস্থাপনা

ক্যানসারকে বলা হয় সবচেয়ে জটিল রোগ। কেননা এই রোগটি সাধারণত পুরোপুরিভাবে সেরে ওঠে না। এবং বিশ্বে ক্যান্সারের কারণে, বিশেষ করে ব্লাড ক্যান্সারের কারণে বহু লোক মৃত্যুবরণ করে।তাই আমাদের উচিত হবে যে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা গ্রহণ করা।

কেননা কোন লোক যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয় তাহলে খুব সহজেই এই রোগ সেরে উঠতে পারে। আর যখন কোন রোগ পুরাতন হয়ে যায় তখন সেই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। নিচে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হলো। 

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ

ব্লাড ক্যান্সারের অনেক লক্ষণ রয়েছে। নিচে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হবে। এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোন লক্ষণ যদি আপনার মাঝে প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত হবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় যদি ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা করানো যায় তাহলে খুব সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন দেখে নেই ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো।
  • দুর্বলতা ও খাবারের অরুচি। দুর্বলতা ও খাবারে অরুচি যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাবধান হতে হবে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে দুর্বলতা খাবারের অরুচি বুক ধড়ফড় করা বা পায়ে পানি জমে যাওয়া এগুলো হতে পারে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ।
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া। শরীরের ওজন যদি ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে তাহলে এটি দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা শরীরের ওজন কমে যাওয়া ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ গুলোর মধ্য থেকে অন্যতম একটি।তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে দেরি করবেন না। 
  • ঘনঘন এবং দীর্ঘস্থায়ী জড় হওয়া। যদি ঘন ঘন জ্বর আসে এবং জোর দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাবধান হতে হবে। কেননা দীর্ঘস্থায়ী ও ঘন ঘন জ্বর ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ গুলোর অন্যতম একটি লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যা যদি আপনি দেখতে পান তাহলে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
  • গ্লান্ড ফুলে যাওয়া। অস্বাভাবিক ভাবে যদি গ্ল্যান্ড ফুলে যায়, তাহলে হতে পারে এটি একটি ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ। সুতরাং অস্বাভাবিকভাবে গ্ল্যান্ড ফুলে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। 
  • অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ। নাক বা শরীরের অন্য কোন জায়গা দিয়ে যদি অস্বাভাবিক ভাবে রক্তক্ষরণ হয় তাহলে আপনাকে বিষয়টি গুরুত্বের সহিত নিতে হবে কেননা এটি একটি ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ। 
  • হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা হওয়া। হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে এটি হতে পারে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ। তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। 
  • ক্ষত সহজে সেরে না ওঠা। শরীরের কোনো ক্ষত যদি সহজে শুকিয়ে না যায় তাহলে এটির দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, কেননা এটি ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ। তাই যদি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে চুপ করে বাসায় বসে থাকা আপনার উচিত হবে না। ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়?

ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়? চিকিৎসা বিজ্ঞান এই প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব এখনো দিতে সক্ষম হয়নি।নির্দিষ্ট কোন কারণ উল্লেখ করতে পারেনি। তবে, বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, কীটনাশক বা পেস্টিসাইড, লুব্রিক্যান্টস, কেমোথেরাপি ড্রাগস, ভেজাল খাবার, রেডিয়েশন এবং কিছু জেনেটিক অসুখ ব্লাড ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়? বা ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা

ক্যান্সার নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে এর মধ্যে থেকে যেই চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়? বা ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।  

কেমোথেরাপিঃ ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেমোথেরাপি কে। কেননা কেমোথেরাপির মাধ্যমে অধিকাংশ ব্লাড ক্যান্সার রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তাই ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি এক নম্বরে অবস্থান করছে। 
যদিও কেমোথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাবহার করলে একজন ক্যান্সার রোগী শতভাগ সুস্থ হয়ে যাবে এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই, তবে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে কেমোথেরাপির সুনাম রয়েছে।কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারণে অনন্যপায় না হলে অনেকেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি করাতে চান না। 

কেমোথেরাপি নিলে অনেক সময় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে, মাথার চুল ঝরে যাওয়া বা চামড়া ঝলসে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হলো যে, বড় কোন রোগ থেকে মুক্তি পেতে গেলে সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মেনে নিতে হয়। 

কেমোথেরাপি যেহেতু বর্তমান সময়ের সবচেয়ে কার্যকর ক্যান্সারের চিকিৎসা তাই এই চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল। অর্থাৎ এ ধরনের চিকিৎসা করাতে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়। তাই অনেকেই
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। তবে ক্যান্সারের আরো অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হবে।

ইমিউনোথেরাপিঃ ইমুনোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম একটি চিকিৎসা পদ্ধতিটি মূলত  শরীরের সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বিশেষভাবে ব্যবহার করে এবং উদ্দীপ্ত করে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোন কিছু শরীরে প্রবেশ করলেই সেদিকে ধ্বংস করে দেয়। তাই ক্যান্সার চিকিৎসায় পদ্ধতিটি খুবই কার্যকর হিসেবে বিবেচিত। কেননা এটি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে বাধা প্রদান করে।

আমাদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই যে সকল এন্টি বডি থাকে, সেগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো কে চিহ্নিত করেছে গুলোকে ধ্বংস করতে পারে। ইমিউনোথেরাপি মুলত শরীরে ব্যবহার করে ক্যানসারের কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। 

ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ

ব্লাড ক্যান্সার যত জটিল একটি রোগের চিকিৎসা খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। ব্লাড ক্যান্সারের যেসকল চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে এ সকল চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য থেকে সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হলো কেমোথেরাপি। রোগীকে কেমোথেরাপি প্রদান করতে বহু টাকা খরচ হয়। ক্যান্সারের রোগীকে একবার দিতে বাংলাদেশি টাকায় ২০০০০ টাকার মতো খরচ হয়।

আর যদি একবার রেডিওথেরাপি দিতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে ২৫০০০ টাকা গুনতে হবে। আর ক্যান্সারের রোগী কে যদি আপনি অস্ত্রোপচার করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে খরচ হবে ৬০০০০ টাকা। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা কতটা ব্যয়বহুল।
আর এ কারণেই এ কথার প্রচলন রয়েছে যে 'ক্যান্সারের এনসার নাই'। তার মানে যদি সাধারন কোন মানুষের ক্যান্সার হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে সেই রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ উন্নত মানের চিকিৎসা করার সামর্থ্য যেহেতু তাদের নেই তাই ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা ও তাদের যৎসামান্য। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকারঃ উপসংহার

উপরে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে যে সকল তথ্য প্রদান করা হবে আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসবে। উপরে ব্লাড ক্যান্সারের যেসকল লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে এই লক্ষণগুলোর কোন একটি যদি আপনার মাঝে আপনি দেখতে পান তাহলে অবশ্যই যতো দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। তাহলে এই ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সতর্ক থাকা এবং রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা বুদ্ধিমানের কাজ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url